আমরা বিশ্বাস বলতে যা বুঝি এবং মনস্তত্ত্ব অনুসারে বিশ্বাস বলতে যা বোঝায় এই দুটির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে। তবে মনস্তত্ত্বে বিশ্বাসের যে সংজ্ঞা সেটি আমাদের আরও বেশী প্রভাবিত করে।
জ্ঞান এবং বিশ্বাস দুটিকে প্রায় একই মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা দুটি ভিন্ন বিষয়। যেমন- আমরা কোন স্থানের মানুষ কেমন, সেখানকার পরিবেশ কেমন ইত্যাদি জানলে বলতে পারি যে উক্ত স্থান ভালো নাকি খারাপ।
অর্থাৎ পর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা বলি উক্ত স্থান ভালো কিংবা খারপ। এটি আমাদের জ্ঞান। আর বিশ্বাস হল এমন একটি ধারণা যেটি শতভাগ প্রমাণ নির্ভর নয়। বিশ্বাস আবেগ প্রসূত ধারণা, যা আমাদের কোন ব্যক্তি বা বিষয়ের প্রতি ইতিবাচক বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
যে কোন মানুষের বিশ্বাসের নেপথ্যে কিছুটা হলেও তার অতীত অভিজ্ঞতার প্রভাব থাকে। যেমন- কোথাও যাবার সময় আপনি দেখলেন কোন একটি রাস্তায় অনেক বেশী যানজট লেগে আছে। পরবর্তীতে সেখানে আবার যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি আপনার মনে থাকবে এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আপনি হাতে সময় রেখে বের হবেন এই বিশ্বাস নিয়ে যে, ঐ রাস্তায় অনেক যানজট।
এছাড়াও বিশ্বাস গড়ে ওঠার পেছনে আমাদের আবেগ একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে। আমরা আমাদের কাছের মানুষদের বিশ্বাস, চিন্তা ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েও অনেক সময় অনেক কিছু নিজেরা আত্মস্থ করে ফেলি এবং সেই মানসিকতা ও আবেগ থেকে আমাদের বিশ্বাস গড়ে ওঠে।
বিশ্বাস আমাদের চিন্তা ভাবনা ও আচার আচরণকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের অনুপ্রেরণা বা হতাশা সৃষ্টির পেছনেও বদ্ধমূল বিশ্বাসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই প্রভাব অনেক সময় ইতিবাচক আবার অনেক সময় নেতিবাচক হয়।
যেহেতু বিশ্বাস গড়ে ওঠার পেছনে অভিজ্ঞতার বা জ্ঞানের থেকে আবেগের ভূমিকা বেশী থাকে, তাই এই বিশ্বাস বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন- রাজনীতিবিদগণ তাদের বিভিন্ন প্রেরণাদায়ী কথার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে তাদের প্রতি বিশ্বাস তৈরি করেন।
আবার যখন কারও বদ্ধমূল বিশ্বাস তার বিভিন্ন মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে, তখন তার মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক ও সুস্থ করার লক্ষ্যে মনস্তত্ত্বিকগণ কাউনসেলিং এর মাধ্যমে ব্যক্তির বিশ্বাস ও চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন করেন।
অর্থাৎ আমরা যা অনুভব করি সেটি হয়তো আমাদের চিন্তা ভাবনার থেকে বেশী মাত্রায় আমাদের বিশ্বাসকে প্রভাবিত করে। আমরা সেটিকেই বিশ্বাস করি যখন আমরা কোন কিছুর সাথে আবেগ দ্বারা যুক্ত হই। অনেক সময় কোন কিছুর প্রতি অতি আবেগ আমাদের অতি বিশ্বাস বা অন্ধ বিশ্বাসের জন্ম দেয়, যা আমাদের ও একইসাথে অন্যদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের জীবনে বিশ্বাসের গুরুত্ব ও প্রভাব অনেক বেশী। এটি যেমন আমাদের জীবনকে ইতিবাচক ভাবে বদলে দিতে পারে, আবার তেমনি নেতিবাচক ভাবেও বদলে দিতে পারে। আমরা আমাদের বিশ্বাসের উপর ভর করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তাই এটা অবশ্যই লক্ষণীয় যে, আমাদের বিশ্বাস আমাদের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করছে নাকি ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে।
আমাদের বিশ্বাস হওয়া উচিৎ আমাদের জীবনকে ইতিবাচক ভাবে বদলে দেবার চাবিকাঠি। যেমন- অনিশ্চিত ভবিষ্যতে কোন কাজে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দেবার সময় আমাদের মনের মাঝে এই বিশ্বাস থাকা উচিৎ যে আমরা পারবো।
যে কোন বিপদে আমাদের বিশ্বাস থাকা উচিৎ যে আমরা এই বিপদ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করতে পারবো। আমাদের বিশ্বাস থাকা উচিৎ আমরাই সৌভাগ্যশালী এবং আমরাই সফল হব। এমন বিশ্বাস আমাদের সফলতার মহী সোপানে পৌঁছে দেবে।
তাই বিশ্বাস রাখুন নিজের উপর। বিশ্বাস রাখুন ইতিবাচক পরিবর্তনে। আপনার বিশ্বাস হয়ে উঠুক আপনার জীবনকে সফলতায় পরিপূর্ণ করার হাতিয়ার।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে