যুক্তরাজ্যের কিশোর-কিশোরীদের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিজের ক্ষতি করে এমন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সহিংস অপরাধ প্রবণতা বেশি। স্বাভাবিক কিশোর-কিশোরীদের তুলনায় তাদের মধ্যে সহিংস অপরাধ প্রবণতা দ্বিগুণের বেশি। নিজের ক্ষতি করার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরে আঘাত করা, কাটা বা আগুন দেওয়া। গবেষকেরা বলেছেন, এসব কিশোর-কিশোরীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে চিকিৎসাভিত্তিক পন্থা বেশি কার্যকর।
১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া ২ হাজার ২৩২ জন যমজ কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে এই গবেষণা হয়েছে। দুই দশক ধরে এদের নানা ধরনের ঝুঁকির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৮ বছর বয়সে নিজের ক্ষতি করার তথ্য সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। সহিংস অপরাধের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে কম্পিউটারে দেওয়া প্রশ্নপত্র ও পুলিশের রেকর্ড থেকে। স্বাভাবিক কিশোর-কিশোরীদের ১৭ শতাংশ সহিংস অপরাধে জড়িত। নিজের ক্ষতি করে এমন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই হার ৩৫ শতাংশ।
জিনগত কারণে কারও মধ্যে সহিংস অপরাধ প্রবণতা বেশি কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার হওয়ার জন্য যমজ কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। যমজরা একই পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে। তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, সহিংস অপরাধ প্রবণতার ক্ষেত্রে একই পরিবারের যমজেরা একই আচরণ করে না। নিজের ক্ষতি করে এমন কিশোর-কিশোরীরা সহিংস অপরাধকে সমস্যা সমাধানের পন্থা হিসেবে দেখে। সহিংসতা তারা অন্যের প্রতি দেখায়, নিজের প্রতিও দেখায়। এরা দ্বৈত ক্ষতির মুখে পড়ে।
যুক্তরাজ্যের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় ও কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা এই গবেষণা করেছেন। এই গবেষণার ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের দ্য আমেরিকান জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত হয়।
গবেষকেরা এটাও দেখেছেন যে নিজের ও অন্যের প্রতি সহিংসতা দেখায় এমন কিশোর-কিশোরীদের একটি অংশ এই বয়সে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। এদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এরা আত্মনিয়ন্ত্রণের সমস্যায় ভোগে।
রোগীর ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে চিকিৎসকেরা দেখেছেন, কায়সারের ব্যবসায়ী বাবা একসময় নিয়মিত মদ্য পান করতেন। বাড়িতে বাবাকে মাতলামি করার স্মৃতিও কায়সারের আছে। চিকিৎসকদের ধারণা, পারিবারিক বৈরী পরিবেশ কায়সারকে মানসিক চাপে ফেলে। কায়সার বলেছে, মা ছাড়া পরিবারের অন্য কেউ তার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেন না।
মেখলা সরকার বলেন, পারিবারিক বিরূপ পরিবেশ, খেলার সঙ্গী না থাকা, পড়াশোনার চাপসহ নানা করণে মানসিক চাপে পড়ে কিশোর-কিশোরীরা। এই বয়সে শারীরিক কিছু পরিবর্তনও ঘটে। সবার পক্ষে এই চাপ ও পরিবর্তন সামলে নেওয়া সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করার দরকার আছে। বড় ভূমিকা রাখতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
কিশোর-কিশোরীদের চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিয়ে গবেষকেরা বলেছেন, চিকিৎসকদের এটা অনুধাবন করতে হবে যে নিজের ক্ষতি করে এমন কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি। এসব কিশোর-কিশোরীর আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ দিলে বা এ ব্যাপারে দক্ষতা বাড়ালে সহিংস অপরাধ থেকে তারা দূরে থাকবে।