আড্ডাবাজ মানুষদের আমি বরাবরই পছন্দ করি। কারণ তারাও আমাকে সমাদার করেন। আড্ডায় মজে যাবার সুনাম-দুর্নাম উভয়ই আমি অর্জন করেছি। আড্ডার অমোঘ টানে জীবনের কত চাওয়া-পাওয়া ভেসে গেছে! আড্ডাবাজদের একটা বড় গুন তাঁরা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পছন্দ করে। তাই জেনে-শুনে কখনোই অনৈতিক কাজ করেনা।
অন্যভাবেও দেখা যায় বিষয়টা অর্থ-সম্পদের লোভ থাকেনা, বৈষয়িক ভাবনা কম, প্রাপ্তির প্রতিযোগিতায় নিজেকে স্থাপন করেনা তাই হয়তো বিও-বৈভবের জগতটা জানা হয়না! তবে আড্ডা ও কাজ যেখানে সমার্থক সেখানে তাঁদের সহজ অবস্থান ঘটে তার মধ্যে সংস্কৃতি অঙ্গন সবচেয়ে উল্লেখ্য। তবে ক্লাব সমিতি এসোসিয়েশনেও তাদের অবলিলা বিচরন আছে। এই ক্ষেত্র সমূহে আড্ডা আর কাজকে পৃথকরূপে আবিষ্কার করা অসাধ্য প্রায়!
আড্ডার সাথে মানসিকতার সম্পর্ক যেমন নিবিড় তেমনি মনেরও আছে প্রাত্যহিক যোগাযোগ। ছোট বেলায় অনেক দুরন্ত ছিলাম বন্ধুদের সাথে একসঙ্গে সময় কাটানোর একটাই উপলক্ষ তা হচ্ছে খেলা। আর বৃহত্তর পরিবারের ভাই-বোনদের রাত জেগে গল্প-সল্প হচ্ছে বড় কালের আড্ডার শুভ উদ্বোধন মাত্র। তবে সেই থেকে অন্তত আমার আড্ডায় নেশা ধরে গিয়েছিল।
কিশোর বয়সে পা রাখি ঢাকায়। স্কুলের বন্ধু পাড়ার বন্ধু দুইভাগে আড্ডা চলতো। আড্ডার মূল বিষয় খেলা। অন্য বিষয় গুলোর মধ্যে পত্র মিতালি ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন ষ্ট্যাম্প সংগ্রহ এ বেশ মজাদার। আড্ডার মূল পর্বে প্রবেশ করি এস.এস.সি পরীক্ষার আগে টেস্টের পর। অন্তত দিনে ৪-৫ ঘন্টা। এ পর্বে প্রিয় গল্প, কবিতা ও রাজনীতি আড্ডার মূল বিষয় হয়ে ওঠে। সহপাঠী ও পাশের বাড়ির জানালাও আড্ডায় আসতো। আর হঠাৎ ঝড়ের মত আবাহনি-মোহামডান! তারপর সৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আবৃত্তি আন্দোলন সাংস্কৃতিক আন্দোলন ….
নিরন্তর আড্ডা আর আড্ডা …অবিরাম বয়ে চলে আড্ডা টি.এস.সি তে চায়ের কাপে ঝড় তুলে দেশ ও দশের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করা স্তব্ধ হয়ে থাকে ঘড়ির কাটা! অবাক বিষ্ময়ে দেখি প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের আড্ডা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছে! কত বিচিত্র মনের দেখা হলো তা শুধু মনেই তোলা রইলো …..! আড্ডা মনকে সতেজ রাখে। কতটা? যতটা সতেজ থাকলে পচন ধরেনা , যতটা সতেজ হলে কদর্যতা বাসা বাধেনা।
আড্ডাবাজদের একটাই দুঃখ যে ঘড়ির কাটা তারা বন্ধ করে রাখতে চায়, তুমুল আড্ডায় ভুলে থাকতে চায় সময় প্রবাহ। অথচ বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন ও বিপরীত! জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত ঐ সকল অবুঝ মনকে রক্তাক্ত করে সর্বক্ষণ। তা বোঝে শুধু আরেকজন আড্ডাবাজ।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।