সুস্থ বিনোদন দিতে পারে মাদক মুক্ত জীবন

সুস্থ বিনোদন দিতে পারে মাদক মুক্ত জীবন

শহর থেকে গ্রামাঞ্চল সর্বত্রই এখন হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য। আর বর্তমান তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ জড়িত এই মাদকদ্রব্যের সাথে।

তবে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সবাই যে তরুণ প্রজন্ম এমনটা বলা যাবে না। প্রায় সব বয়সের মানুষ মাদক নিচ্ছে। ১৫ বছরের নিচে ছেলে-মেয়েরা যেমন মাদকাসক্ত হচ্ছে তেমনি যাদের বয়স ৫০-৬০ বছন তারাও মাদকাসক্ত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাদকাসক্ত তরুণ প্রজন্মদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষিত, বেকার যুব সমাজরাও আছেন। বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণে হতাশাগ্রস্ত বা মানসিক রোগে আক্রান্ত এরকম একটা বড় অংশ আছে যারাও মাদকের ঝুঁকিতে রয়েছে।

করোনা মহামারীর মধ্যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার বড় একটা ঝুঁকি আছে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তন হলো আগে যেমন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছিল। তাদের সুস্থ বিনোদনের জায়গা ছিল। কিন্তু এখন তাদের সুস্থ বিনোদনের জায়গা কমে গেছে।

যার ফলে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ সময় কাটাচ্ছে ঘরে বসে। যেখানে তারা সবসময় অনলাইনে যুক্ত থাকছে। মোবাইল অ্যাডিকশন এবং ফেইসবুক অ্যাডিকশন বা পর্নোগ্রাফির মত অ্যাডিকশনে পড়তেছে শিক্ষার্থীরা। তরুণ প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তির কবলে পড়ে সেখান থেকেই তার হতাশা এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এইগুলো থেকে দূর হওয়ার জন্য সে মাদকাসক্তির পথ বেছে নিচ্ছে। এখানে বন্ধু-বান্ধবের উৎসাহের মাধ্যমে মাদক আসক্ত হচ্ছে যুবসমাজ।

বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ এর বাইরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযানে পরিচালনা করেও মাদক নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার একটি প্রধান কারণ মাদকের সহজ লভ্যতা বা প্রাপ্তি। যেটা আগেও কারণ ছিল এখনও আছে- মাদক সব জায়গায় এবং খুব সহজেইা পাওয়া যাচ্ছে।

যদিও সরকার অনেক সচেষ্ট। বডার গার্ড, পুলিশ, র‌্যাব যথেষ্ট দক্ষতার সাথে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। তারপরেও মাদক আমোদের দেশে প্রবেশ করছে, কোন ভাবে পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।

আবার সহজ প্রাপ্যতা হলেই যে মাদকের প্রবণতা বেড়ে যাবে এমনটা নয়। এর অন্য কারণগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যারা মাদক নিচ্ছেন তাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই যুবক।

যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এই তরুণ প্রজন্ম মাদক নেওয়ার প্রধাণ কারণ হলো বন্ধুদের দেখে নিয়ে থাকে। আরেকটা বড় কারণ হলো তার ব্যক্তিত্য ধরণ । তার ভেতরে নতুন কিছু খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা বা বৈশিষ্ট থাকে।

মাদকাসক্তি সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্য এবং রোগীর সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার মতে মাদকাসক্তি ব্যক্তিরা শতকরা ৭০ থেকে ৯০ ভাগ যেকোনো ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। তাদের ভেতরে দেখা দেয় বিষণ্নতা ডিপ্রেশন এবং অন্যান্য উদ্বেগজনক মানসিক রোগ।

এর সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় ফিজিক্যাল এবং সাইকোলজিক্যাল বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। মাদকাসক্তি ব্যক্তিদের অস্বাভাবিক চিন্তাভাবনা, সন্দেহ করা, ভাঙচুর এবং ব্যক্তিত্বের সমস্যা হয়।

এক পর্যায়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কারণ তার মাদকের আসক্তি মেটানোর জন্যই তার অর্থের প্রয়োজন হয়। আর এ প্রয়োজনে সে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজ শুরু করে দেয়।

আমাদের দেশের জনগণের অনেকেই কিন্তু জানেনা যে কোথায় গেলে মাদকাসক্তের চিকিৎসা পাওয়া যায়। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা। বাংলাদেশে মাদকের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি আগের থেকেও বেশি পরিমাণে তৈরি হলেও আরো অনেক বেশি কাজ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা আছে।

অন্যদিকে সুস্থ বিনোদন পারে সব বয়সের মানুষকে মাদকাসক্তি থেকে বাঁচাতে। সুস্থ বিনোদন শুধু মাদকাসক্তিই নয় বরং মানুষকে মানসিক ভাবেও সু্স্থ রাখতে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে আমরা সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারি। তাই আমাদের সুস্থ বিনোদনমূলক কাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleব্রণ হওয়ায় মানসিক উদ্বেগ এবং মুক্তির উপায়
Next articleদোষ-গুণে অন্তরঙ্গতা বাড়ে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here