একজন অতিরিক্ত রাগী সঙ্গীর সাথে মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন। তবে তার এই রাগের পেছনে কি কি কারণ লুকিয়ে আছে সেগুলো চিহ্নিত করে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারলে সঙ্গীর রাগ সামলানো বেশ সহজ হয়ে যাবে।
অনেক সম্পর্ক এমন থাকে যে, দুজন সঙ্গীর একজন অত্যন্ত রাগী হয়। খুব অল্পতেই অনেক বেশী রেগে যাওয়া স্বভাবের মানুষ যেমন কারও উপরই তাদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা তেমনি সঙ্গীর প্রতিও বিভিন্ন সময়ে বেশ অনুচিত আচরণ করে বসেন। এই অযথা রাগ করা সমস্যা বা অল্পতেই অনেক বেশী রেগে যাওয়া সঙ্গীর সমস্যা নিয়ে যারা ভুগছে আজকের লেখাটি তাদের জন্য।
রাগের এই বিড়ম্বনা কেন হচ্ছে এবং এটি সামলাবার উপায়ই বা কি- এসব নিয়ে মনস্তত্ত্ববিদগণ কি বলছেন সেই অনুসারে কিছু সহজ সমাধান এই লেখাটির মাধ্যমে আপনি পেয়ে যেতে পারেন।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মাঝে এমন রাগ করার সমস্যা থাকে তাদের অধিকাংশই নিজের রাগের কারণ হিসেবে অন্যদের আচার ব্যবহার বা পরিস্থিতিকেই দোষারোপ করে। তারা কখনোই বুঝতে চায়না এই সমস্যা তাদের এবং এর পরিবর্তন প্রয়োজন।
আবার অনেকের ক্ষেত্রে এমনও হয়, যারা নিজেদেরকেই তাদের এই অযাচিত রাগের জন্য দোষারোপ করে। হয়তো তারা শৈশবে এমন পরিবেশে বড় হয়েছে যেটি তাদের মধ্যে এ ধরণের অভ্যাসের জন্ম দিয়েছে।
আবার অনেকের জীবনের বিভিন্ন দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা তাদের মনে তীব্র ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং বিষণ্ণতা সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে রাগের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ধরণের মানুষ মনের মধ্যে এক ধরণের শূন্যতা এবং নিজেদের অসুরক্ষিত মনে করেন, যা তাদের এ ধরণের আচরণে প্রেরিত করে।
তাই সঙ্গীকে দোষারোপ করার আগে বা সম্পর্কে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আগে খুঁজে বের করুন আপনার সঙ্গীর রাগের প্রকৃত কারণ। আর তাহলেই তার এ ধরণের আচরণ গত সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে এবং সম্পর্ক সুন্দর ও ভালোবাসাপূর্ণ হয়ে উঠবে।
নিচে এ ধরণের কিছু কৌশল উল্লেখ করা হল, যেগুলো আপনার সঙ্গীর অযাচিত রাগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
১. সব সময় সঙ্গীর রাগের কারণ হিসেবে নিজের উপর দায় চাপাবেন না। সঙ্গী যে কোন কারণে রেগে গেলেই সেটির কারণ হিসেবে নিজেকে দায়ী করা থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনার মানসিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব কম পড়বে।
২. সঙ্গী রাগ করলে কখনোই নিজে ধৈর্য হারা হবেন না। যে কোন কারণে আপনার সঙ্গী রেগে গেলে উল্টো নিজেও রেগে গিয়ে কথা বলা বা রাগকে বাড়িয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এ সময় ধৈর্য হারা হবেন না।
৩. দরকার হলে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন। সঙ্গী রেগে গেলে তার সব কথা শুনতেই হবে এমন কোন বিষয় নেই। চরম পরিস্থিতিতে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন বা সেই কক্ষ বা স্থান ত্যাগ করতে পারেন। এতে পরিস্থিতি আরও নেতিবাচক পর্যায়ে যাওয়া থেকে আটকানো যাবে।
৪. রাগের মূল কারণ অনুসন্ধানের প্রয়াস করুন। সঙ্গীর রাগ কেবল তার স্বভাবজাত কারণেই হচ্ছে এমনটি ভেবে ভুল করবেন না। রাগের পেছনে থাকতে পারে হতাশা, কোন পুরনো অভিজ্ঞতার ফলে সৃষ্টি হওয়া মানসিক অবসাদ বা বিষণ্ণতা। তাই সমস্ত দোষ সঙ্গীকে না দিয়ে বরং রাগের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার প্রয়াস করুন।
৫. প্রয়োজনে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করুন। যদি সঙ্গীর রাগ কিংবা সম্পর্কে এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন ভালো মনস্তাত্ত্বিক বা কাউন্সেলর দ্বারা কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করুন। এতে সমস্যা সমাধান হবে।
রাগ মানুষের স্বাভাবিক আবেগ প্রকাশেরই একটি মাধ্যম। তবে অনেক সময় এটি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন এর নেতিবাচক প্রভাব ব্যক্তির নিজের উপর, তার সঙ্গীর উপর এবং সম্পর্কের উপরেও পড়ে।
তাই যদি আপনার রাগ সম্পর্কিত কোন সমস্যা থাকে নিজেই এটি নিয়ে সচেতন হবার প্রয়াস করুন। কিংবা যদি আপনার সঙ্গীর এমন সমস্যা থাকে তাহলে চোখ বুজে তার উপর সব দায় না দিয়ে বরং এর মূল কারণ এবং সমস্যা সমাধানে উপরের কৌশলগুলো অনুসরণ করুন। দুজনের প্রয়াসে অবশ্যই এই সমস্যা দূর হবে।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/fixing-families/202109/how-deal-explosively-angry-partner
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে