মানসিক রোগ নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙছে

মানসিক রোগ নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙছে

গ্রিক শব্দ psyche অর্থ মন, আত্মা। Psychiatry অর্থ মনোরোগ বিদ্যা। মনের আবার রোগ! মন কোথায় থাকে? মনের রোগের উপসর্গগুলোই বা কী? ইত্যাদি অনেক অনেক প্রশ্ন জাগতে পারে। যেহেতু এতদিন আমরা কেবল শরীরের অসুখের কথাই জেনে এসেছি; তাই মনের রোগ কারও কাছে মনে হতে পারে নতুন কিছু।
Pre-affirmation mental disease_21-02-2015
মন থাকে বুকের মাঝখানে, এমনও হয়তো অনেকের ধারণা। যেহেতু নাটক-সিনেমাতে মনকে বুকের মাঝে দেখানো হয় কিংবা বুকের মাঝখানেতে (সামান্য বামে) থাকা হৃদপিণ্ডকে এবং হৃদপিণ্ডের আকৃতিকে মন বা হৃদয়ের প্রতীক বলে দেখানো হয়। কিংবা বাস্তবে নিজেই যখন দেখি খুব বেশি কষ্ট পেলে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যায়; এমনকি অনেক সময় কিছু শ্বাসকষ্ট অনুভব করি, তাই ভাবি মন বুঝি বুকের মাঝে। সত্যি কি তাই?
সত্য হলো, কষ্ট পাওয়ায় বুক ভেঙ্গে যাওয়ার অনুভূতির কারণ হচ্ছে হৃদপিণ্ড ও শ্বাসতন্ত্রের ওপর স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া। মন থাকে মস্তিষ্কে।
মনের অসুখ কী কেবল বাহ্যিক বা পারিপার্শ্বিক কারণেই হয়? যেমন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার মধ্যে বসবাস করলে দুশ্চিন্তার রোগ, কোনো গভীর দুঃখ ভুলতে না পারলে বিষন্নতার রোগ, মাদকাসক্তদের বিভিন্ন মানসিক রোগ ইত্যাদি। মোটেই তা নয়, বরং বেশিরভাগ জটিল মানসিক রোগ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়, যেগুলোর কারণ এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে অনেকাংশেই অজানা।
দেহ ও মন যেহেতু পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত; তাই শরীর খারাপ করলে যেমন মন খারাপ হয়; মন খারাপ করলে তেমনি শরীরও খারাপ হয়। শুধু শরীর-মন খারাপ হওয়া নয়, একটির কারণে অন্যটিও রোগগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। যেমন, দীর্ঘদিন যারা শারীরিক অসুস্থতায় ভোগেন, তারা অনেকাংশে বিষন্নতাসহ নানাবিধ মানসিক রোগেও আক্রান্ত হন। অন্যদিকে, মানসিক রোগাক্রান্তদেরও নানা ধরনের শারীরিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানসিক রোগীদের আমরা কেবল মানসিক রোগী বলেই চিহ্নিত করি, শারীরিক রোগীদের মত হার্টের রোগী, ডায়াবেটিসের রোগী কিংবা হাপানির রোগীর মত আলাদা করে চিনতে পারি না।
তবে কি মানসিক রোগ মাত্র একটি কিংবা এর কোনো শ্রেণিবিভাগ নেই? সত্যি হচ্ছে, মানসিক রোগ শতশত। তার মধ্যে সাধারণ কিছু রোগ হল- সিজোফ্রেনিয়া, এনজাইটি ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার, হিস্টেরিয়া বা কনভার্সন ডিসঅর্ডার, পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার, সেক্সুয়াল ডিসফাংশন, মাদকাসক্তি ইত্যাদি।
মানসিক রোগ নির্ণয়ে এখনো ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্নায়ুবিদ্যা (নিউরোসায়েন্স) মনোরোগবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় মনোরোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু হচ্ছে। তাই আগে আমরা যেমন, সব রোগকে অর্গানিক (শারীরিক রোগ, যেটা পরীক্ষা করে প্রমাণ করা যাবে) নতুবা ফাংশনাল (মানসিক রোগ যেটা পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করা যায়না) এটা আর বেশি যৌক্তিক থাকছেনা। সাইকিয়াট্রি অগ্রগামী হয়ে নিউরো-সাইকিয়াট্রি হচ্ছে। নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কারের মাধ্যমে মানসিক রোগের উন্নততর চিকিৎসা হচ্ছে। ধরে বেঁধে শাস্তি দিয়ে চিকিৎসা দেয়ার দিন ফুরাচ্ছে। ভাঙছে মানসিক রোগ নিয়ে সমাজে প্রচলিত ভুল এবং ক্ষতিকর ধারণাগুলো।
ডা. কৃষ্ণ রায়
এম ডি (সাইকিয়াট্রি) ফেইজ- এ, রেসিডেন্ট
মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

No posts to display

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here