ব্রিটেনের তরুণদের স্মার্টফোনের উপর এতটাই নির্ভরশীল যে এটি একটি আসক্তির মতো হয়ে গেছে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের এক গবেষণায় সম্প্রতি এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গবেষণা বলছে, স্মার্টফোনে আসক্ত প্রায় এক চতুর্থাংশ তরুণ।
কিংস কলেজ লন্ডনের এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এ আসক্তিমূলক আচরণের অর্থ তারা যদি মোবাইল ফোন সবসময়ের জন্য হাতে না পায় তাহলে তারা ‘আতঙ্কিত’ বা ‘বিচলিত’ হয়ে পড়ে।
স্মার্টফোনে আসক্ত এই তরুণরা মোবাইল ফোনের পেছনে যে পরিমাণ সময় ব্যয় করে তারা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
জরিপে সতর্ক করা হয়েছে যে এই ধরণের আসক্তি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় রূপ নিতে পারে। এই গবেষণাটি বিএমসি সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত হয়। সেখানে ‘স্মার্টফোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের’ ওপর ৪১টি জরিপ চালানো হয়, এতে অংশ নেয় মোট ৪২,০০০ তরুণ-তরুণী।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ২৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর আচরণ কোন ধরণের আসক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ – যেমন তাদের মধ্যে ফোন ব্যবহার করতে না পারায় উদ্বেগ কাজ করে।
এছাড়া মোবাইল ফোনে ব্যয় করা সময় কমাতে পারে না এবং মোবাইল ফোন এত বেশি ব্যবহার করা হয় যে এটি অন্যান্য কাজকর্মে ক্ষতি করে।
‘মোবাইল ফোনে সারাক্ষণ’
এ ধরনের আসক্তিমূলক আচরণ অন্যান্য শারীরিক ও মানিসক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে, যেমন স্ট্রেস বা শারীরিক ও মানসিক চাপ, হতাশা, খিটখিটে মেজাজ, ঘুমের অভাব এবং স্কুলের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়া।
কিংস কলেজ লন্ডনের সাইকিয়াট্রি, সাইকোলজি এবং নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের নিকোলা কাল্ক বলেছেন, অবস্থা এমন স্মার্টফোন যেন তাদের কাছে থাকতেই হবে। ফলে এখন স্মার্টফোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের সমস্যাটি বোঝার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা এখনো জানি না যে স্মার্টফোন নিজেই আসক্তি তৈরি করছে নাকি এই ফোনে যেসব অ্যাপ্লিকেশন মানুষ ব্যবহার করছে, তার মাধ্যমে এই আসক্তি তৈরি হচ্ছে।”
“এছাড়া শিশু এবং তরুণদের মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে এবং বাচ্চারা ফোনে কতটা সময় ব্যয় করছে অভিভাবকদের তা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত।”
তবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআরসি কগনিশন অ্যান্ড ব্রেইন সায়েন্সেস ইউনিটের গবেষণা ফেলো অ্যামি ওরবেন বলছেন, মোবাইল ব্যবহারের প্রভাবকে সরলীকরণ করা যাবে না।
“এটি আগেও দেখানো হয়েছে যে স্মার্টফোনের প্রভাব সব সময় একমুখী হয়না। ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার যেমন মানুষের মেজাজে প্রভাব ফেলতে পারে, তেমনি মানুষের মন-মেজাজ স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে,” ডা ওরবেন বলেছেন।