বাজিমাত দীপিকা!!!
‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ‘রেস টু’ এর মতো অনেক ব্যবসা সফল ছবির এখন তার সাফল্যের ঝুড়িতে। কিন্তু ‘ওম শান্তি ওম’ দিয়ে বড় পর্দায় পা দেয়া দীপিকা এর মধ্যেও ভুগেছেন হতাশা, বিষণ্ণতা আর উদ্বিগ্নতায়। যে সিনেমা তাকে ‘মহান’ করে তুললো সেই ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ এর শুটিং করেছেন তিনি বিষণ্ণ মন আর উদ্বিগ্নতার মধ্যে।
হ্যাঁ। সত্যি। সম্প্রতি তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন তার বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতায় ভোগা এবং তা সেরে উঠার গল্প।
দীপিকা বলেন, ‘‘২০১৪ সালের শুরুর দিকে কাজের জন্য প্রশংসিত হচ্ছিলাম। কিন্তু একদিন আমি ক্লান্তির কারণে অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আমার আর ভালো লাগছিলো না। কেন জানি, দিনটা অন্যরকম লাগছিলো। সেই থেকে আমি আমার মধ্যে প্রচণ্ড শূন্যতা অনুভব করতে লাগলাম।’’
অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা আগ্রহ নিয়ে মুখিয়ে থাকেন স্বপ্নের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে নিজেকে দাঁড় করাতে চান স্বপ্ন বাস্তবায়নে।
দীপিকা পাডুকোনও দেখেছেন এক সময় এ স্বপ্ন। হয়েছে তার বাস্তবায়নও। আবার ঘটছে উল্টোটাও। এখন তার সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে রয়েছেন মুম্বাই পাড়ার পরিচালক-প্রযোজকেরা। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ব্লকবাস্টার হওয়ার পরই বলিউডে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আগ্রহের মণি হয়ে উঠেছেন ‘গুলিয়ন কি রাসলীলা: রাম লীলা’র লীলা।
এই শূন্যতাবোধকে মানসিক চাপ হিসেবে উপলব্ধি করেন দীপিকা। এ চাপকে কাটিয়ে উঠতে কাজের প্রতি বেশি করে মনোযোগ ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা বাড়িয়ে দেন। কিন্তু এতো সাময়িক মুক্তি মিললেও উদ্বিগ্নতা ছেড়ে যায়নি তাকে।
তিনি বলেন, ‘‘কিছু সময়ের জন্য সুস্থ অনুভব করলেও হতাশা পুরোপুরি কাটছিলো না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এবং অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিলাম। কিছুদিন পর এর মাত্রা আরও বেড়ে গেল।”
এ অবস্থায় দীপিকা মা উজালা পাডুকোনের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করেন। মেয়ের অবস্থা বুঝে মনোরোগবিদ বান্ধবী আন্না চান্দি’র কাছে নিয়ে যান।
‘আমি আন্না চান্দি আন্টিকে মনের সব কথা বললাম। আমার কথা শুনে তিনি বললেন, আমি মানসিক রোগে ভুগছি। তিনি আমাকে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন। কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি আমি চিকিৎসা নেই। এরই মধ্যে আমি অন্য আরেক মনোরোগবিদ ড. সায়েম ভাটের সাথে দেখা করি এবং পরামর্শ নেই। এই সময়ই হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর বেশির ভাগ শুটিংয়ের কাজ শেষ করি।’
হ্যাপি নিউ ইয়ার-এর শুটিং শেষ করে নতুন বছরটা সুন্দর করে শুরু করতে দু’মাসের ছুটি যেন সিনেমা পাড়া থেকে। মানসিক প্রশান্তি আর শারীরিক সুস্থতার জন্য বেঙ্গালুরুতে বাবা-মায়ের সঙ্গে টানা দুমাস কাটান তিনি।
কিন্তু এরপর মুম্বাইয়ে এসেই তিনি জানতে পারেন দুশ্চিন্তা ও হতাশায় তার এক বন্ধু কারণে আত্মহত্যা করেছে। বন্ধুর এ আত্মহত্যার ঘটনার পর মানসিক রোগ নিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজে লেগে পড়েন দীপিকা। এ ব্যাপারে কাজ করতে নিজের একটি টিমও গঠন করেছেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জয়ী এ অভিনেত্রী।
মানুষ শারিরীক অসুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও মানসিক রোগ নিয়ে তেমন ভাবেন না। অথচ মানুষের জন্য দুটোই সমান গুরুত্মপূর্ণ। বিষণ্ণতায় ভুগছেন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলবেন, আরে কিছু না, ঠিক হয়ে যাবে। এতে কান দেবেন না। বিশেষজ্ঞের কাছে না গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে-বিষণ্ণতা কি তা হাড়ে হাড়ে বুঝেই এ পরামর্শ দিয়েছেন দীপিকা।
তবে বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠলে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর মতো জীবনটাও ‘ব্লকবাস্টার’ হয়ে উঠে। দীপিকার মতে, ‘‘বিষণ্ণতা সবচেয়ে ভয়াবহ মানসিক রোগ। এ রোগে যারা ভোগেন তাদের কাছে কোনো কিছুর এমনকি জীবনেরও কোনো অর্থ নেই। কিন্তু যারা এ রোগ সেরে উঠেন তারা খুব ভালো করেই বুঝতে পারেন জীবনের মানে।’’
সম্পাদনা: ফারুক হোসেন
মনেরখবর.কম