ফ্রয়েড নিয়ে অল্প স্বল্প

0
189

আধুনিক যুগে যে কয়েকজন মনীষী সমগ্র বিশ্বের মানুষের চিন্তা ভাবনা, দর্শন, সমাজ, সাহিত্য, শিল্পকলা, শিক্ষাব্যাবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা সহ প্রাত্যহিক জীবনের প্রায সবকিছুতেই প্রভাব ফেলতে সক্ষম হযেছেন, অস্ট্রিয়ার স্নায়ুবিদ, মনোরোগবিদ এবং মনস্তাত্ত্বিক সিগমুন্ড ফ্রয়েড(১৮৬৫-১৯৩৯) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মনোসমীক্ষন (সাইকোএনালাইসিস) পদ্ধতির জনক। যেমন বহুল আলোচিত/প্রশংসিত, তেমনি বহুল সমালোচিতও। তবে কোনভাবেই উপেক্ষার যোগ্য নন।

Primitive lust-01-23-02-15

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের আগে শারীরিক অসুখ ছাড়াও মানুষের মনের অসুখ হতে পারে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তা খুব বেশি ভাবতে পারেনি। হিস্টেরিয়া রোগ (বর্তমানে নাম কনভারসন ডিসঅর্ডার) লাতিন হিস্টেরাস শব্দ থেকে এসেছে। হিস্টেরাস শব্দের অর্থ জরায়ু। মেয়েদের জরায়ু থাকে বলে, তখন মনে করা হতো হিস্টেরিয়া কেবল মেয়েদের রোগ। পরবর্তিতে প্রমাণিত হলো এ রোগ পুরুষেরও হতে পারে। ফ্রয়েড সংবেশন(হিপনোটিজম) পদ্ধতি প্রয়োগ করে মানুষের মনের গভীরে, গোপন কোনে, লুকিয়ে থাকা কথাগুলো/কুটেষাগুলো বের করে আনার কৌশল বের করেছিলেন। যা সাইকোএনালাইসিস নামে পরিচিত। তিনি দেখেছিলেন মনের গভীর কোনে লুকানো কুটেষা/চাপা ক্ষোভ বা যন্ত্রণা, মন থেকে বের হয়ে গেলে রোগি জাদুর মত সুস্থ্য হয়ে উঠছে। মিলছে মুক্তির আনন্দ।

মনকে তিনি প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করেছিলেন, সচেতন(কনসাস) এবং অচেতন/অবচেতন(আনকনসাস)। দেখতে হিমশৈলীর মত, যার উপরিভাগ সচেতন অংশ মাত্র ১ এবং বাকি ১১ ভাগই গভীরে অচেতন মন। অচেতন মনের একটা ছোট অংশ আবার অধিচেতন (প্রিকনসাস); যা সহসাই সচেতন মনে ধরা দেয়না। বরং খুব করে মনে করার চেষ্টা করলে তবেই ধরা দিতে পারে। সচেতন মন- যা সহসাই ধরা দেয়, আমাদের সচেতন অবস্থার কর্মকান্ডগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। অচেতন মন ধরা দেয় স্বপ্নের মধ্যে, বেফাঁস মন্তব্যের মধ্যে, সংবেশিত অবস্থার (হিপনোটাইজড অবস্থার) মধ্যে এবং ছদ্মবেশে আমাদের সচেতন সব কাজের মধ্যে। ফ্রয়েড মনে করেন, অচেতন মনই পরোক্ষভাবে সচেতন মনের নিয়ন্ত্রক। আর এই অচেতন মনের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে কাম/হিংসা/হিংস্রতা/আত্মবিনাশ অনুভূতি। এর মধ্যে কামই মূখ্য। তবে তা সরাসরি কাম আকারে প্রকাশিত নাও হতে পারে। হতে পারে পুলক অনুভূতির সন্ধান, আনন্দের সন্ধান করা। সেই আদি কামের পরোক্ষ/ছদ্মবেশী রুপ; যা প্লেজার প্রিন্সিপাল নামে পরিচিত। তিনি বলেন, আমাদের সচেতন মনের যাবতীয় কার্যকলাপ মূলত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে (ছদ্মবেশে) অচেতন মনে বন্দী করা কাম দ্বারা তাড়িত।

মানুষ সভ্য হওয়ার পথে সামাজিক চাপে শৈশব থেকেই সবচেয়ে বেশি দমন করে কামকে অর্থাৎ সচেতন মন থেকে অচেতন মনে পাঠায়। যা মরেনা বরং ঘুমিয়ে থাকে এবং সুযোগ পেলেই বিভিন্ন ছদ্মবেশে বের হয়ে আসার জন্য ছটফট করে। ফ্রয়েডের মতে, মনের অচেতন অংশ জুড়ে থাকে অদ্ (ইদ) এবং সচেতন অংশ জুড়ে থাকে বাস্তবতা বোধ (ইগো) এবং নৈতিকতা বোধ (সুপার ইগো)। বৃহৎ অচেতন ইদ অংশে থাকে আদিম কামনা, বাসনা, হিংস্রতা, জিঘাংসা ইত্যাদি। এই অচেতন অংশের কামনাগুলোকে সচেতন অংশে আসতে ইগো এবং সুপারইগোর বাঁধা পেরোতে হবে; যারা কড়া দ্বাররক্ষীর কাজ করে। সহজে বেরোবার উপায় নাই। হয় ছদ্মবেশে, আনমনে, নতুবা ঘুমের ঘোরে।

লেখক
ডা. কৃষ্ণ রায়
এম ডি (সাইকিয়াট্রি) ফেইজ- এ, রেসিডেন্ট
মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

Previous articleমানসিক রোগ নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙছে
Next articleসিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মানসিক রোগ বিভাগের সেবাতথ্য
ডা. কৃষ্ণ রায়
রেসিডেন্ট, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here