আমরা চিন্তা করি না খেয়ে একদম ১০ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলবো। এমন যদি ভেবে থাকেন তাহলে এখনই সেই চিন্তা বাদ দিন। কম খাবার কখনই ওজন কমাতে সাহায্য করে না।
ওজন কমাতে নানান রকম খাদ্যাভ্যাস যেমন- ‘ফ্যাড ডায়েট’, ‘কুইক ফিক্স’, ‘ডেটক্স’ ইত্যাদি কার্যকর। তবে কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল দেয় না।
ওজন কমাতে ও সুস্থ থাকতে চাইলে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। অনেক সময় ওজন কমাতে খাবার তালিকা থেকে বিভিন্ন খাবার বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় যা ঠিক নয়।
‘ডায়েট’ এবং ওজন কমানোর যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তা আসলে তেমন স্বাস্থ্যকর নয় সেই বিষয়ে আলোকপাত করেনে চিকিৎসার মাধ্যমে ওজন কমানোর বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদ ডা. এড্রিয়েন ইয়ুডিম।
ক্যালিফোর্নিয়ার এই চিকিৎসক বলেন, “ওজন কমাতে কার্যকর ‘ফ্যাড ডায়েট’ ও অন্য দ্রুত সমাধানগুলো যে তথ্য দেয় তা ভুল। এখানে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিগুলো সত্যভাবে উপস্থাপন করা হয় যা আমাদের সঠিক তথ্য থেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া, অনেক সময় এখানে অতি নিয়ন্ত্রিত ও অবাস্তব প্রত্যাশা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যা কেবল নিজের মাঝে অপ্রাপ্তি ও অনুশোচনা সৃষ্টি করে।”
সুস্থ থাকতে নিজের প্রতি মনোযোগ দিন। খাবার সম্পর্কে দেওয়া ভুল তথ্যের ওপর ভরসা না করে বরং স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে সুসম্পর্কে বাড়ানো উচিত। ইয়ুডিমের মতে, “খাবারের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করুন। ক্ষুধা কি করে তা বোঝার চেষ্টা করুন। হয়ত একাকিত্ব, হতাশা অনুভব করছেন। নিজের প্রতি মনোযোগী না হলে নানারূপ আবেগিক অবস্থা দেখা দিতে পারে। আবেগের সঙ্গে নিজেকে পুষ্ট বা সুস্থ্য রাখতে এই তথ্যগুলো জানা প্রয়োজন।”
ইয়ুডিমের মতে, সুস্থ থাকতে পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করার পাশাপাশি একটা ‘সঠিক পরিবেশ’ গড়ে তোলা প্রয়োজন যেন তা দৈনিক খাবার ও চলাফেরা মাধ্যমেও প্রভাবিত হয়। ফলে সুস্থ জীবন ধারা মেনে চলা অনেকটাই সহজ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বেশকিছু উপায় দিয়েছেন নিয়মিত খাবার খেয়ে ওজন কমানোর।
চলুন দেখি আসি সেই পন্থাগুলো।
রেফ্রিজারেটরে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা
সুস্বাস্থ্য অর্জনে সফল হতে রেফ্রিজারেটরে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা উপকারী। রেফ্রিজারেটরে ‘ফ্রোজেন’ বা প্রক্রিয়াজাত খাবার না রেখে পুষ্টিকর খাবার রাখা হলে ক্ষুধার সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতে সময় নিন
স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতে রান্নাঘরে সারাদিন সময় ব্যয় করার প্রয়োজন নেই।
স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করা মানে এই নয় যে সারাদিন সময় ব্যয় করে রান্না করতে হবে। এমন অনেক খাবার আছে যা সহজেই রান্না করা যায়। এবং তা স্বাস্থ্যকরও বটে।
পর্যাপ্ত ঘুম
গবেষণায় দেখা গেছে অপর্যাপ্ত ঘুম ক্ষুধার হরমোনেকে বাড়িয়ে তোলে। ‘দ্যা জার্নাল অব স্লিপ রিসার্চ’য়ে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, এক রাতের ঘুমের ঘাটতি ‘গ্রেলিন’ নামক ক্ষুধা বর্ধক হরমোনের মাত্রা বাড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্যা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)’ অনুযায়ী, প্রাপ্ত বয়স্কদের সুস্থতার জন্য দৈনিক কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন এবং এটা পরের দিনের ঘুম ঘুমভাবও কমায়।
নিজের প্রতি যত্নশীল হন
নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। এটা একটা প্রক্রিয়া তবে নিজের প্রতি ভালোবাসা ও মনোযোগ থাকলে তা করা সম্ভব।
‘সাইকোলজি টুডে’ অনুযায়ী, ইতিবাচক মনোভাব অবচেতন মনোভাবের ওপর ফেলে। এর প্রভাব পড়ে বাহ্যিকভাবে যেমন- ওজন ও নিজের অবয়বের ওপর।
‘ফ্যাড ডায়েট’, ‘কুইক ফিক্স’, ‘ডেটক্স’ ইত্যাদি খাদ্যাভ্যাস ওজন কমায়। কিন্তু তা স্থায়ী নয়। তাছাড়া এভাবে চিকন হওয়া সামান্য নিয়ম ভঙ্গ করলে আর কাজে দেয় না।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া মানেই নিজের পছন্দের খাবারকে বাদ দেওয়া নয়।
পছন্দের খাবার পুষ্টিকর উপায়ে তৈরি করে খাওয়া শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখে বলে জানান, ইয়ুডিম।
আমরা যে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের নামী-বেনামী ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল থেকে তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্য কমাতে চেষ্টা করি, তা চরম আকারের ভুল। এই ভুলগুলো তরুণ বয়সে হয়তো আমরা বুঝতে পারি না। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ভুল্গুলোর প্রভাব আমাদের শরীরে পড়তে থাকে। দেখা দেয় নানা রকম শারীরিক সমস্যা। যা আমাদের মানসিকভাবে অপরাধবোধে ভুগায়। কেন স্বাস্থ্য কমাতে এমন করেছি! ওজন কমাতে খাবার ত্যাগ নয় বরং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে