খেলাধুলার মাঝেই বেশি ভালো থাকি: ফুটবলার শেখ মো. আসলাম

[int-intro]বাংলাদেশ ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। গোল মেশিন হিসেবে খ্যাত তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক। পেয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার সহ অসংখ্য পুরষ্কার ও সম্মাননা। খেলাধুলার মাঝেই নিজের ভালো থাকাটা খুঁজে পান তিনি। তিনি শেখ মোহাম্মদ আসলাম। মনেরখবর পাঠকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানাচ্ছেন তাঁর ভালোলাগার কথা, ভালো থাকার কথা, কষ্টের কথা, আশার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন। [/int-intro]

[int-qs]কেমন আছেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]হ্যাঁ ভালো আছি।[/int-ans]
[int-qs]কীভাবে ভালো থাকেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]আমি মূলত ক্রীড়া জগতের মানুষ, তাই খেলাধুলার মাঝেই বেশি ভালো থাকি।[/int-ans]
[int-qs]খেলাধুলায় আসার অনুপ্রেরণা পেলেন কীভাবে?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]আমি যে পরিবারের বড় হয়েছি তাকে একটা ক্রীড়া পরিবার বলা যায়। সবাই কোনো না কোনো ভাবে খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিল। তার থেকে বাবার হাত ধরে আমার ক্রীড়াতে আসা।[/int-ans]

[int-qs]মন খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]মন খারাপ হয়। অনেক বেশিই মন খারাপ হয়।[/int-ans]
[int-qs]কী কী কারণে মন খারাপ হয়?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]যেহেতু আমি খেলাধুলার লোক বিশেষ করে ফুটবল জগতের। তাই যখন দেখি দিনদিন দেশের ফুটবলের মান পড়ে যাচ্ছে তখন খারাপ লাগে।[/int-ans]

[int-qs]যেমন?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”] এটা শোকের মাস, এ মাসে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের যারা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধান জানিয়ে বলি, ফুটবলের ভালো অবস্থানে আমাদের যে আবির্ভাব হয়েছিল সেটা আমি বলবো না, তবে গর্বভরে খেলতাম যে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এমন একটা চিন্তা চেতনা থেকেই এশিয়া ও ইউরোপের মাঠে আমরা ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছি। কিন্তু এখন যখন দেখি সেই ফুটবল দিনদিন নিচের দিকে যাচ্ছে তখনই ব্যথাটা লাগে।  [/int-ans]

[int-qs]দু’একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে দেশের খেলাধুলার প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই এমন অবস্থা। কারণটা কী বলে মনে করেন?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]আমার মনেহয় এখন আমাদের সময় এসেছে প্রকৃত সংগঠকদের খুঁজে বের করার। একজন ক্ষুদ্র সংগঠক হিসেবে আমি বলবো টাকাকে মাপকাঠি ধরে কখনও ভালো সংগঠক পাওয়া যায় না। [/int-ans]

[int-qs]একজন ভালো সংগঠকের কী ধরনের গুণাবলীর প্রয়োজন বলে মনে করেন?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]একজন ভালো সংগঠক হতে গেলে তাকে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে সে একজন ভালো সংগঠক। একজন ভালো সংগঠক তার  সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে দেশের যুব সমাজের সেবা প্রদান করবে। এবং দিনশেষে কি ফল করতে পারলেন সেইটাই মানুষ মূল্যায়ন করবে।[/int-ans]

[int-qs]টাকাটা কীভাবে আসছে?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]টাকা আনাটা কিন্তু একজন সংঠকের জন্য খারাপ কিছু নয়, বরং ভালো দিক। টাকা ছাড়া এই উন্নত বিশ্বে তাল মিলিয়ে চলা যাবে না। সেই টাকাটা যদি ইয়ুথ জেনারেশনের জন্য খরচ করা যায় তাহলে সেটাই হবে একজন ভালো সংগঠকের প্রমাণ।[/int-ans]

[int-qs]টাকাটা ভুল খাতে ব্যয় হচ্ছে?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]ঠিক তাই। আজকে টাকাটা যদি যুব সমাজের জন্য সঠিক খাতে ব্যয় করা হয় তাহলে যুব সমাজের যে অবক্ষয় ও জঙ্গীবাদের যে উত্থান এর থেকে কিছুটা হলেও আমরা পরিত্রাণ পেতে পারবো। [/int-ans]

[int-quote]আজ আমাদের সন্তানেরা কোন পরিবেশে মিশছে তা আমরা জানি না। এই পরিবেশটা তৈরি করার দায়িত্ব আমাদের। বাট উই হ্যাভ ফেইলড টু গিভ দেম এ গুড প্ল্যাটফর্ম। এদিক থেকে আমি বলবো আমাদের পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা সবকিছু নিয়ে নতুন করে বিচার বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে। এসব নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখবো এখন আমাদের যোগ্য নেতৃত্ব দরকার এবং উপযুক্ত লোকের হাতে দায়িত্ব পৌঁছে দেয়া দরকার।[/int-quote]

[int-qs]তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত খেলাধুলার বিকাশ যুব সমাজের অবক্ষয় রোধ করতে পারে কি?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]হ্যাঁ, আজ সারা বাংলাদেশ ব্যাপী ফুটবলটাকে যদি ছড়িয়ে দেয়া যেতো তাহলে যুব সমাজ বাজে আড্ডায় লিপ্ত হতে পারতো না। আজেবাজে সঙ্গ ও আড্ডা থেকেই আজকে এই উগ্রবাদের উত্থান হয়েছে বলে আমি মনে করি।[/int-ans]

[int-qs]বর্তমানে খেলাধুলার জন্য মাঠের অপ্রতুলতা রয়েছে, এমতাবস্থায় শুধু খেলে ছড়িয়ে দিতে চাইলেই তা সম্ভব কি?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]খুব ভালো প্রশ্ন করেছেন। আমাদের সময় যেমন উন্মুক্ত খেলার মাঠ আমরা পেয়েছি এখন তা নেই। সেই মাঠগুলো এখন দখলদাররা দখল করে নিয়েছে। বিশেষ করে আমি বলবো তথাকথিত ডেভলোপারদের কথা, সঠিক নীতিমালা অনুসরণ করে তারা যদি কাজ করতো তাহলে প্রতিটা অঞ্চলে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ থাকতো। সেদিক থেকে আমি সরকারের নজরে দিতে চাই যে এই ডেভলোপারদের সাথে আলাপ আলোচনা করে হলেও মাঠগুলো অবমুক্ত করা হোক। [/int-ans]

[int-qs]বাচ্চাদের খেলাধুলার পর্যাপ্ত স্থানের অভাব এবং এটা নিয়ে কেউ সেভাবে কথাও বলছে না। এর দায়টা কি আমাদের উপরও বর্তায় না?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]এখন দেখুন, রিহ্যাবের যারা কর্মকর্তা আছেন তাদের নিজেদেরও তো ছেলে মেয়ে আছে। তাদেরও তো সুস্থভাবে বেড়ে উঠার অধিকার আছে। এদিকে আমরা সাধারণ যারা তাদেরও একটা দায়িত্ব আছে এ বিষয়ে কথা বলার এবং সোচ্চার হওয়ার। আমাদের সকলকে মিলেই একটা সুন্দর বসবাসযোগ্য শহর তৈরি করতে হবে।[/int-ans]

[int-qs]ব্যক্তিগত প্রশ্ন। রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]রাগ হয়। নিজের উপর রাগ হয় বেশি।[/int-ans]
[int-qs]কি নিয়ে রাগ হয়?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]একটা সময় ছিলো যখন দেশের ফুটবলের স্বার্থে অথবা সমাজ গঠনের স্বার্থে কাজ করেছি। কাজ করেছি ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে। যখন আমাদের যৌবন ছিল তখন আমাদের ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু এখন যখন বয়স বেড়েছে এবং কিছুটা দূরে আছি তখন আমাদের ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। ফুটবল ফেডারেশনের গত নির্বাচনে যারা আমাদের ভোট দিয়েছেন তাঁদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি তাঁরা আমাদের নামের উপর ঐভাবে বিচার করে ভোট দেননি। আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি এই কারণে যে সবার সাথে মিলিয়ে আমাদেরকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। যেটা ছিল ভুল। কেননা সমাজ গঠনে কোনো না কোনো ভাবে আমরা অবদান রেখেছি। আমাদের কাজের উপর বিচার বিশ্লেষণ করে ভোট দিলে এত কম ভোট পাওয়ার মতো আমরা নই। এদিক থেকে বিচার করলে নিজেকে নিজে ধিক্কার দিতে হয়। [/int-ans]

[int-qs]আমরা সবাই মিলেই কি নেতৃত্ব সংকট তৈরি করছি?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]আজ আমাদের সন্তানেরা কোন পরিবেশে মিশছে তা আমরা জানি না। এই পরিবেশটা তৈরি করার দায়িত্ব আমাদের। বাট উই হ্যাভ ফেইলড টু গিভ দেম এ গুড প্ল্যাটফর্ম। এদিক থেকে আমি বলবো আমাদের পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা সবকিছু নিয়ে নতুন করে বিচার বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে। এসব নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখবো এখন আমাদের যোগ্য নেতৃত্ব দরকার এবং উপযুক্ত লোকের হাতে দায়িত্ব পৌঁছে দেয়া দরকার। [/int-ans]

[int-img name=””]https://monerkhabor.com/wp-content/uploads/2016/08/aslam-2.jpg[/int-img]
[int-qs]ফুটবলে গোল করাটাকে কীভাবে উপভোগ করতেন?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]গোল করাটা কষ্টকর একটা ব্যাপার। গোল করার একটা লাইন থাকে। ঐ লাইনটা চেনা খুব দুষ্কর। একজন স্ট্রাইকারকে সেই লাইনটা খুঁজে পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়। আমি মাঝেমধ্যে খুশি হই যখন আমার সময়কার দর্শকরা আমাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করে তখন কিছুটা হলেও স্বার্থকতা বোধ করি যে দেশের ফুটবলের সেবা করতে পেরেছি। [/int-ans]

[int-qs]খেলাধুলা কি শুধু শারীরিক বিকাশ ঘটায় নাকি নেতৃত্ব গুণেরও বিকাশ ঘটায়?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”] মাঠে ১১ জন খেলোয়াড়ের নেতৃত্ব যারা দিয়েছেন, নিজেদের ক্রীড়াশৈলী দিয়ে দর্শকদের যারা মুগ্ধ করেছেন, আমার মনেহয় তাদের মধ্যে আপনা থেকেই এক ধরনের নেতৃত্বগুণ গড়ে উঠে। তাছাড়া আমাদের দেশে খুব বড় মাপের নেতা যারা ছিলেন, যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নিজে ফুটবলার ছিলেন। খেলার মাঠ মানুষের মনের পরিধির বিকাশ ঘটায়। [/int-ans]

[int-qs]খেলাধুলার উন্নয়নে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]খেলাধুলার নীতি নির্ধারক যারা আছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলবো, সুন্দর ক্রীড়া বিপ্লব যাতে ঘটতে পারে সে ধরনের একটা প্রোগ্রাম স্কুল লেভেলে দেয়া উচিত। স্কুল লেভেলের পরিক্ষায় যদি খেলাধুলার উপর কিছু নম্বর দিয়ে দেয়া যায় আবশ্যিক বিষয় হিসেবে তাহলে স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক যারা আছেন তারা বাচ্চাদের খেলার মাঝে মনোনিবেশ করাতে পারবে।[/int-ans]

[int-qs]নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবে কি?[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে বলবো, পেশাদার ফুটবলার হিসেবে তাদের উপর অনেক দায়িত্ব। একটা সময় মাঠে দর্শক ছিলো, আমি আশা করবো ফুটবলাররা তাদের খেলার আন্তরিকতা দিয়ে আবারো দর্শকদের মাঠমুখী করবে। [/int-ans]

[int-qs]মনেরখবর পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।[/int-qs]

[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনারা আপনার সন্তানদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হোন। তাদের প্রয়োজন ইচ্ছা এগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের খেলাধুলাতে উৎসাহিত করুন। কম করে হলেও সপ্তাহে অন্তত দুইদিন তাদের খেলার মাঠে নিয়ে যান।[/int-ans]

[int-qs]ধন্যবাদ আপনাকে মনেরখবর পাঠকদের সময় দেয়ার জন্য।[/int-qs]
[int-ans name=”শেখ মো. আসলাম”]ধন্যবাদ মনেরখবর পাঠদেরও।[/int-ans]

Previous articleবিষণ্নতা নিয়ে মার্কিন সাঁতারুর স্বর্ণ জয়
Next articleব্রিটেনে স্কুলগামী ছাত্রীদের এক তৃতীয়াংশ মানসিক অসুস্থতার শিকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here