আবেগ নিয়ন্ত্রণ কেন প্রয়োজন?

0
18
আবেগ নিয়ন্ত্রণ কেন প্রয়োজন?

ডা. দিল মোহাম্মদ সাজ্জাদুল কবির সবুজ
রেজিস্ট্রার, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

আবেগ হচ্ছে মনের এমন অবস্থা যার ব্যক্তিগত, শারীরিক এবং আচরণগত দিক রয়েছে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে একজন মানুষ প্রকাশ করে থাকে। সুখানুভূতি, ভালোবাসা, ভয়, ক্রোধ, ঘৃণা- সবই আবেগের উদাহরণ।

আবেগ নিয়ন্ত্রণ কেন প্রয়োজন?

আবেগ নিয়ন্ত্রণ কেন প্রয়োজন?

আবেগের ধরন

ইতিবাচক আবেগগুলো হলো আনন্দ, আত্মবিশ্বাস, উৎসাহ, কর্মোদ্দীপনা, দৃঢ় চেতনা ইত্যাদি। আর নেতিবাচক আবেগগুলো হলো দুঃখ, হিংসা, দুশ্চিন্তা, মূল্যবোধ কমে যাওয়া, ভয়, উদাসীনতা ইত্যাদি।

ইতিবাচক আবেগের প্রভাব

ইতিবাচক আবেগ মানুষের মধ্যে বর্তমান এবং ভবিষ্যতে ভালো অনুভূতি তৈরি করে, মানুষ অধিক সৃষ্টিশীল হয়, নতুন নতুন ধারণা, সুযোগ এবং লক্ষ্যে নিয়মিত কাজের আগ্রহ বাড়ায়। মানুষ প্রতিকূল অবস্থায় শান্ত থাকে এবং দ্রুতই আগের অবস্থায় ফিরতে পারে। তাছাড়া ইতিবাচক আবেগ চাপ সহনশীলতা বাড়ায় এবং পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটায়।

নেতিবাচক আবেগের প্রভাব

নেতিবাচক আবেগ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা তৈরি করে, মানুষের মধ্যে নিঃসঙ্গতা, নিরাপত্তাহীনতা ও আত্মসম্মানবোধের ঘাটতি তৈরি করে। তাছাড়া নেচিবাচক আবেগপ্রবণ মানুষ উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, অনিদ্রা, রোগ প্রতিরোধ কমে যাওয়া এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।

নেতিবাচক আবেগের কারণ

মানসিক এবং শারীরিক উভয় কারণেই আবেগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যাদের আবেগের সমস্যা হয়ে থাকে

পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার, অপজিশনাল ডিফিয়েন্স ডিজঅর্ডার, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার, অ্যাটেনশন ডেফিশিট হাইপারএকটিভিটি ডিজঅর্ডার, অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, ডিপ্রেশন, অটিজম, ডিমেনশিয়া, নেশাগ্রস্থতা ইত্যাদি। শারীরিক রোগগুলো হলো- স্ট্রোক, ব্রেন টিউমার, ডিলিরিয়াম ইত্যাদি।

আবেগের প্রকাশ

আবেগের উৎপত্তি, অনুভূতি ও বিকাশ জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে শৈশব, কৈশোর এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও চলমান থাকে। আবেগের প্রকাশ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, জ্ঞান ও আচরণের বিকাশের মাধ্যমে ঘটে এবং নির্দিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে প্রকাশ পায়।

আবেগ নিয়ন্ত্রণ

আবেগ নিয়ন্ত্রণ বলতে একজন মানুষের নিজের আবেগকে শনাক্ত করা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং সামাজিকভাবে সহনশীল উপায়ে সাড়া দেওয়াকে বোঝায়।

আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা

নিজেদের প্রতি অধিক যত্নশীল হওয়া যায়। যেকোনো সমস্যা এবং কঠিন পরিস্থিতিকে ভালোভাবে মোকাবেলা করা যায় এবং যৌক্তিক সমাধান বের করা যায়। তাছাড়া পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো এবং বজায় রাখা যায়।

আবেগ নিয়ন্ত্রণ কেন প্রয়োজন?

কখন আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন

উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য কারো আবেগ খুব তীব্র মাত্রায় হলে যেমন-চিৎকার করা, কান্নাকাটি করা, আর্তচিৎকার করা অথবা আক্রমণাত্মক আচরণ (নিজের প্রতি, অন্যের প্রতি, কোনো বস্তু অথবা জীবজন্তুর প্রতি)। তাছাড়া আবেগের সমস্যার কারণে সম্পর্ক অথবা সামাজিকতা রক্ষা করতে সমস্যা হলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

বিগত দুই দশক ধরেই শিশু-কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে গবেষণা চলছে। তুলনামূলকভাবে প্রাপ্তবয়স্করা তাদের আবেগের উপর বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। ১ বছরের নিচে বাচ্চাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মিউজিক চালনা বেশ কার্যকরী পদ্ধতি।

তাছাড়া বাচ্চারা তাদের মায়ের কথা শুনলেও শান্ত হয়। ১ থেকে ৩ বছরের বাচ্চারা আগে থেকেই কিছুটা আবেগ কন্ট্রোল করা শিখে থাকে। আবেগকে চিহ্নিত করলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। তাছাড়া এই বয়সে বাচ্চারা অন্যদের অনুকরণ করেও আবেগ কন্ট্রোল করতে শিখে।

শৈশবকালে বাচ্চাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের কিছু উপায় রয়েছে, যেমন- আবেগ চিহ্নিত করা, যেসব বিষয় আবেগের উদ্রেক করে তা চিহ্নিত করা। ছবি আকার মাধ্যমে বিভিন্ন আবেগ বোঝানো এবং মডেলিংয়ের মাধ্যমে আবেগের প্রকাশ সম্পর্কে বাচ্চাদের ধারণা দেওয়া যায়।

এতে করে বাচ্চারা নিজেদের আবেগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। মাইন্ডফুলনেস শেখানো এবং বাচ্চাদের তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের উপায় শিক্ষাদান করলে বাচ্চারা সহজেই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ডায়ালেক্টিক্যাল বিহেভিয়ারেল থেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ারেল থেরাপি, রিলাক্সেশন থেরাপি, মাইন্ডফুলনেস প্রেক্টিস, প্রবলেম সলভিং কাউন্সেলিং কার্যকরী উপায়। পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক রোগ থাকলে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দীর্ঘসময় ভালো থাকা যায়, কর্মক্ষেত্রে অবদান বাড়ে, পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটে এবং সামগ্রিকভাবে সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক হয়। তাই যাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে তারা অনিয়ন্ত্রিত আবেগের ব্যাপারে সংকোচ না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে সহজেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

জুয়া আসক্তকে কীভাবে সহায়তা করা যায়?

আরও পড়ুন:

Previous articleযৌনতা নিয়ে ভুল ধারণা
Next articleশহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পালিত হলো বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here