সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম দায়িত্ব যেটা তাদের মনস্তত্ত্ব এবং ব্যক্তিত্বের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে সেটি হল সন্তানের নামকরণ। কেন এই নামকরণ এতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেটিই আজ জানার চেষ্টা করব।
শিশুকে নাম প্রদান করা অভিভাবকের শিশুদের প্রতি পালন করা বিভিন্ন দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম প্রথম, প্রধান এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলা একটি কাজ। এতে কোন সন্দেহই নেই যে সব অভিভাবকেরাই এই কাজটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে করে থাকেন। তবে এমনও অনেকে আছে যারা এই নামকরণের বিষয়টিকে খুব সাধারণভাবে দেখে পছন্দসই কোন মানুষ, যেমন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর নামে, কিংবা শুনতে সুমধুর বা আনন্দদায়ক মনে হচ্ছে এমন নামে শিশুর নামকরণ করেন। কিন্তু এটি মনে রাখেন না যে নাম এমন একটি বিষয় যা সমগ্র জীবন তার সাথে থেকে যায়। আর পরবর্তীতে তাদের সন্তানদের মানসিক অবস্থার উপর যথেষ্ট জটিল প্রভাব ফেলে। তাই এই নামকরণের বিষয়ে প্রত্যেক পিতামাতারই বেশ সতর্ক থাকা উচিৎ।
শিশুর নাম করণের ক্ষেত্রে অপ্রচলিত নাম থেকে সাধারণত প্রচলিত নামই ব্যবহার করা লাভদায়ক হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় অপ্রচলিত নাম একটি শিশুকে তার সমবয়সী অন্যান্য শিশুদের মাঝে কম জনপ্রিয় করে তোলে বা হাসির পাত্র করে তোলে। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, শিশুরা বা অন্যান্য ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের নামের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ বা তাদের কাছে প্রচলিত এমন মানুষদের সাথে মিশতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এতে যাদের নাম সাধারণত অপ্রচলিত হয় তারা অন্যান্যদের সাথে স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারেনা, চরম হীনমন্যতায় ভোগে এবং বিশেষত শিশুরা এর ফলে নিজেদের অত্যন্ত একাকী এবং সবার থেকে আলাদা ভাবতে বাধ্য হয়। তারা চরম মানসিক চাপের মাঝে থাকে এবং এতে তাদের মানসিক বিকাশ চরমভাবে বাধাগ্রস্তও হয়।
তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই নাম একজন মানুষের জীবনে তার লক্ষ্য, চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব নির্ধারণেও সহায়তা করে। যখন অভিভাবকেরা তাদের সন্তানের অর্থপূর্ণ এবং ইতিবাচক নাম রাখে তখন শিশুরা এসব নামের অর্থ জেনে সেই শব্দের অর্থের প্রতি নিজের অজান্তেই আকৃষ্ট হয়। তাদের মাঝে ঐ অর্থের একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। নিজের ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতায় সে সেই গুণের বিকাশ ঘটাতে আগ্রহী হয়। এভাবে তার মানসিকতা একটি ইতিবাচক লক্ষ্য নিয়ে বিকশিত হয় যা সারা জীবন তাকে সঙ্গ দেয় এবং বজায় থাকে। নাম শুধু তারই নয় বরং তার ব্যক্তিত্বেরও পরিচয় হয়ে ওঠে।
আবার অনেক পিতামাতা তাদের নিজেদের নামের সাথে মিলিয়ে তাদের সন্তানদের নামকরণ করেন। এটিও অনেকাংশেই শিশুর মনস্তত্ত্বে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। যেমন, পিতা বা মাতার নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখলে সন্তানের সাথে তার পিতামাতার সম্পর্ক আরও গভীর হয়। তারা ছোটবেলা থেকেই তাদের পিতা মাতার সাথে অন্যরকম মনস্তাত্ত্বিক ঘনিষ্ঠতা অনুভব করে। আবার এর ফলে কিছু নেতিবাচক প্রভাব ও পড়তে পারে। যেমন, অনেক সময় পিতামাতার জীবনাদর্শ শিশুদের জন্য মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অভিভাবকদের তাই শিশুর নাম করণে অত্যন্ত সতর্ক ভূমিকা পালন করা উচিৎ। কারণ এটি তাদের শিশুর মানসিক বিকাশ এবং ব্যক্তির সারা জীবনে তার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক হিসেবে কাজ করে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই শিশুদের অর্থপূর্ণ এবং ইতিবাচক মানসিক শক্তি প্রদান করে এমন নাম রাখা উচিৎ।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে