সদ্য শেখা কোন কিছু মনে রাখতে ঘুম বিশেষ ভূমিকা রাখে!

আমরা অনেকেই ছোটবেলায় শুনেছি সক্কাল বেলা ঘুম থেকে উঠে, যখন চারপাশ নিশ্চুপ; তখন পড়লে পড়া বেশি মনে থাকে! এই প্রচলিত ধারণাটা যে একদম ভুল, সেটা বলা যাবে না। অনেকেরই দীর্ঘদিন ধরে সকালবেলা উঠে পড়ার অভ্যাসগত কারণে, ঠিক ঐ সময়টাতে পাঠে অধিক মনযোগী হওয়ার দরুন এমনটা হতে পারে। সেটা অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু অভ্যাসের বাইরে এসে মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণার আলোকে আলোচনা করলে ঠিক এর বিপরীত ফলটা পাওয়া যায়!
ওয়াশিংটনে গত ১১ থেকে ১৫ নভেম্বর হয়ে গেল সোসাইটি ফর নিউরোসায়েন্সের বার্ষিক সভা। সেখানে উপস্থাপিত হাজারো গবেষণাপত্রে নতুন নতুন কিছু উত্তর বা ফাইন্ডিংস পাওয়া গেছে। আমাদের মেমরি বা স্মৃতি, ঠিক মোবাইলের মেমরি কার্ডের মত না। আমরা যা শিখি, সেগুলো নির্দিষ্ট কোন স্থানে জমা হয়ে থাকে না। মস্তিষ্কে কিছু কানেকশন তৈরি হয় যার নাম নিউরাল কানেকশন। মস্তিষ্ক ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্যাটার্নে কাজ করে। বিষয়টা সহজে বুঝতে হলে, কল্পনা করুন যে- আপনার বাসা থেকে ঢাকার শাহবাগে আসার জন্য হাজারো রাস্তা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন! প্রতিটা রাস্তায় আপনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। মস্তিষ্কের ভিতরেও রয়েছে এমন হাজারো-লক্ষ রাস্তা! সেসব রাস্তা দিয়ে ইলেকট্রনরা ঘোরাফেরা করে! আপনার প্রতিটা স্মৃতির জন্য আলাদা আলাদা রাস্তা রয়েছে! আপনি যখন কোন কিছু মনে করতে চেষ্টা করছেন, তখন আসলে আপনি লাইব্রেরিতে বই খোঁজার মত করে ব্রেইনের একটা কক্ষে গিয়ে তথ্য খোঁজার চেষ্টা করছেন না! আপনি ইলেকট্রনকে একটা নির্দিষ্ট পথে হাঁটাতে চাইছেন, যাতে ঐ তথ্যের জন্য আপনার ব্রেইনে যে নিউরাল কানেকশনটা জমা করা আছে সেটা স্থাপিত হয় আর তথ্যটা আপনার মনে পড়ে!
আপনি যখন পড়ছেন বা কিছু শিখছেন, তখন আপনার মস্তিষ্কে প্রতিনিয়ত এমন নিউরাল কানেকশন তৈরি হচ্ছে! নতুন নতুন কানেকশন এসে পুরনো কানেকশনগুলোকে দুর্বল করে দিচ্ছে! তাই সকাল বেলা পড়ার পরে এই যে সারাদিন আপনি আরও আরও কতকিছু করছেন, এগুলো সকালে স্থাপিত কানেকশনগুলোকে দুর্বল করে দেয়। কিন্তু রাতে পড়ে যখন আপনি ঘুমিয়ে পড়েন, তখন নতুন কোন কানেকশন স্থাপিত তো হয়ই না; বরং ঘুমানোর আগে স্থাপিত কানেকশনগুলো আরও শক্ত হয়!
বিজ্ঞানীরা কিছু মানুষকে সকালবেলা বেশ কিছু ছবি দেখিয়ে তাদেরকে না ঘুমাতে দিয়ে মস্তিষ্কের এ্যাক্টিভিটি রেকর্ড করেছেন। আরও কিছু মানুষকে রাত্রিবেলা ছবি দেখিয়ে ঘুমাতে দিয়ে তাদের মস্তিষ্কের এ্যাক্টিভিটি তথা ইইজি স্ক্যান নিয়েছে! ১২ ঘণ্টা পরের যে মস্তিষ্কের এ্যাক্টিভিটি, সেটা দুইদলের ক্ষেত্রে দুধরনের ছিল! ছবিগুলো দেখানোর ফলে যে কানেকশন বা এক্টিভিটির উদ্রেক হয়েছিল, সেগুলো ঘুমানো দলের ক্ষেত্রে অধিকতর শক্তিশালী ছিল! আরেকটা এক্সপেরিমেন্টে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়, যেটা ঘুমন্ত অবস্থায় মস্তিষ্কের এক্টিভিটির প্যাটার্ন দেখে বলে দিতে পারবে যে, ঘুমের আগে ব্যক্তিটিকে কি মুখের ছবি দেখানো হয়েছিল নাকি ঘরবাড়ির! দুই ধরনের ছবিতে যে ভিন্ন ভিন্ন নিউরাল প্যাটার্ন তৈরি হবে, সেটার আলোকে! কম্পিউটার প্রোগ্রামটি ৬৫% ক্ষেত্রে সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিল!
সুতরাং ঘুম শুধু ক্লান্তি দূর করা কিংবা শরীরকে পুনরায় চার্জ করা কিংবা শুধুমাত্র অলসতার লক্ষণ না! আমাদের শেখা ও মনে রাখার পিছনেও ঘুমের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে!
তথ্যসূত্র:
(https://www.psychologytoday.com/blog/brain-waves/201711/sleep-strengthens-recent-learning-and-negative-memories)
ফিরোজ শরীফ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

Previous article দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন দিতে পারে সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য
Next articleসিলেটে মানসিক স্বাস্থ্য ও অসংক্রামক রোগের উপর প্রশিক্ষণ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here