সন্তানের যৌনস্বাস্থ্য কী করবেন মা?

0
200
সন্তানের যৌনস্বাস্থ্য কী করবেন মা?

একজন প্রতিবন্ধী ছেলের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। ছেলেটির মা ওকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক বিশেষজ্ঞ দেখাচ্ছেন। নিয়মিত ওষুধ খেলে ছেলেটি নিয়ন্ত্রণে থাকে। ছেলেটি বিবাহিত। একটি তিন বছরের মেয়েও আছে। মেয়েটিকে সে অনেক আদর করে। ছেলেটির বউ বেশ যত্নশীল। গরীব ঘরের মেয়ে বলে এটাকেই সে ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তাই তার কোনো অভিযোগ নেই। শাশুড়ি বউটির যত্ন খেয়াল করেন। ছেলেটির বুদ্ধির মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছু কম হওয়াতে তাকে মৃদু মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে ডায়গনোসিস করা হয়েছে। ছেলেটির চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিসাইকোটিকস এবং বুদ্ধির স্বল্পতার কারণে কিছু যৌন সমস্যা দেখা দিয়েছে যা ছেলেটির মা একদিন আমাকে জানালেন। শুধু এই ছেলেটির মা নয় আরো অনেক প্রতিবন্ধীদের মায়েরাই এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন।

প্রতিবন্ধী শিশুদের যৌনতার বিকাশে মায়েরা যেভাবে ভূমিকা রাখেন সেভাবে আমরা সুস্থ ছেলেমেয়েদের যৌনতার বিকাশে মায়েদের ভূমিকা রাখতে দেখি না। অথচ এ ধরনের সাহায্য তাদেরও প্রয়োজন বিশেষ করে শিশুদের বিকাশের সময় মায়েরা যদি সহজ করে কিছু বলেন তাহলে পরবর্তী জীবনে সেটা তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। কৈশোরে বেড়ে ওঠার সময় সে যদি অবাঞ্ছিত কোনো অভিজ্ঞতার শিকার হয় তবে সহজেই তা মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। যৌনতা আমাদের জীবনের অংশ তা তাকে যতই ঢেকে রাখা হোক না কেন। সন্তান যদি মায়ের কাছ থেকে যৌনতার ব্যাপারে জানে তাহলে সঠিক ধারণা পাওয়া সহজ হয়। কিছু কিছু সত্যি পরিবার থেকেই শিখতে পারে।

কখন এবং কীভাবে

যখনই যেরকম সুযোগ আসে সেটাকে কাজে লাগান। যেমন টিভিতে গর্ভবতী মহিলাকে দেখালে সহজ করে বলতে পারেন মানুষের জন্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে। বিব্রতকর কোনো প্রশ্ন এলে বলুন পরে বুঝিয়ে বলবেন। যৌনতার কোনো প্রসঙ্গ এলে জানতে চাইতে পারেন এ বিষয়ে সে কী জানে। যেমন- ‘তুমি কী মনে করো’ ‘তুমি কী জানো’ ইত্যাদি প্রশ্ন করা যেতে পারে। শিশুর বয়স অনুসারে যতটুকু গ্রহণযোগ্য ততটুকু বলুন। কোনো মিথ্যা বা ভুল ধারণা দেবেন না। যৌনতার ক্ষেত্রে আপনার ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ বয়স অনুযায়ী শেয়ার করুন।

শরীরের যে স্থানগুলো একেবারেই ব্যক্তিগত সে ব্যাপারে সচেতন করুন। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মেয়ে শিশুকে নয়, ছেলে শিশুকেও এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। যৌনতা শিক্ষার ব্যাপারে তথ্য, মূল্যবোধ, দায়িত্ব ও আত্মশক্তিকে গুরুত্ব দিন। সবটা যদি আপনার পক্ষে বলা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সঠিক তথ্য কোন উৎস থেকে পেতে পারে তা বলুন।

আমাদের দেশে যৌন শিক্ষা পাঠক্রমে না থাকার কারণে টিনএজাররা যৌনতা বিষয়ে কৌতূহল মেটাতে ইউটিউব, নিষিদ্ধ সিনেমা এবং নিষিদ্ধ বইয়ের দিকে ঝোঁকে। এসবের বেশির ভাগই মনগড়া। ভালো হয় যদি বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো উৎস থেকে তারা তথ্যটা পায়। সে ধরনের উৎসের খোঁজ আপনি তাকে দিতে পারেন। মূল্যবোধ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি তাকে যা শেখাবেন সেটাই তার জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে। যৌনতা যে একটি পারস্পরিক অনুমতিসাপেক্ষ বিষয় সেটা তাকে বলতে হবে। তার নিজের অনুমতির গুরুত্ব তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। নিজ নিজ আচরণের দায়িত্ব নেওয়া শেখাতে হবে। দায়িত্বহীন আচরণ কোনটি তা বলতে হবে। নিজের শক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা কিভাবে পাবে, কিভাবে আত্মবিশ্বাসী হবে সেটাও বলা প্রয়োজন।

যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা অপরিহার্য। যদিও এই ধরনের চর্চা কম পরিবারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে আমাদের জীবনে। যৌন নিপীড়ন এবং নিপীড়ন পরবর্তী মানসিক জটিলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। ধর্ষণ প্রতিরোধে এ ধরনের শিক্ষা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তাই একজন দায়িত্বশীল মা হিসেবে আপনার সন্তানের যৌনতার বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।

অধ্যাপক ডা. এস এম আতিকুর রহমান

মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৫ম সংখ্যায় প্রকাশিত।   

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে  

 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleশিশুদের মানসিক সমস্যা : চিকিৎসা নেবেন কখন?
Next articleটি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here