পৃথিবীর ইতিহাসে রাগ যখন ধ্বংসের কারণ

পৃথিবীর ইতিহাসে রাগ যখন ধ্বংসের কারণ

রাগ বা ক্রোধ প্রকৃত পক্ষে কী? রাগ বা ক্রোধ হলো অতি সাধারণ একটি প্রতিক্রিয়া যা অন্য কোনোকিছু বা কারো প্রতি আপনার বিরোধপূর্ণ মানসিকতাকে প্রদর্শন করে এবং এটি তখন সৃষ্টি হয় যখন আপনার মাঝে এই ধারণা তৈরি হয় যে, তারা আপনার সঙ্গে কোনো প্রকার অন্যায় করেছে।

রাগ একটি ইতিবাচক প্রক্রিয়া বা বিষয়ও হতে পারে। এটি আপনাকে অন্যদের প্রতি আপনার নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশের বা কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার একটি সুযোগ করে দেয়। আবার রাগ হতে পারে চরম দুঃখ, দুর্দশা এবং বিশৃঙ্খলার একটি কারণ।

যখন কারো প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি অনেক কম হয় তখন সে স্বাভাবিকভাবে রেগে যেতেই পারে বা এটি হতে পারে তার প্রতিবাদের একটি মাধ্যম। তবে সব কিছুর শেষে যে বিষয়টি মুখ্য হয়ে ওঠে সেটি হলোÑএকজন ব্যক্তি কীভাবে তার রাগ বা ক্রোধকে প্রকাশ করছে সেটি মূলত তার ব্যক্তিত্বকেই তুলে ধরে। অতিরিক্ত রাগ অত্যন্ত ভয়াবহ ফলও বয়ে নিয়ে আসতে পারে।

রাগ বা ক্রোধের বেশ কিছু উদাহরণ আমরা গ্রিক পুরাণে খুঁজে পাই। ইলিয়াড এ একটি যুদ্ধের উল্লেখ রয়েছে যা প্রায় দশ বছর স্থায়ী হয়েছিল। যখন স্পার্টার রাজা মেনেলসের স্ত্রী হেলেন একজন ট্রোজান রাজকুমার প্যারিসের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। আর এই যুদ্ধ ছিল ক্রোধান্বিত সেই রাজার ট্রয় রাজ্য আক্রমণের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা যে রাজ্য-পূর্বে অভেদ্য হিসেবে পরিচিত ছিল।

অতীতে প্রশংসিত নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস এখন ইতিহাসের পাতায় গণহত্যার জন্য কুখ্যাত। যিনি রাগের বশবর্তী হয়ে অসংখ্য দরিদ্র নেটিভ আমেরিকানদের হত্যা করেছিলেন যখন তিনি জানতে পারেন তার আবিষ্কৃত স্থানে ভারতের মতো ধন-সম্পদ নেই।

ইতিহাসের আরেকজন কুখ্যাত মানুষ অ্যাডলফ হিটলারের ক্রোধ হয়েছিল হাজার হাজার ইহুদিদের মৃত্যুর এবং একটি সর্বনাশা বিশ্ব যুদ্ধের কারণ যা শেষ হয়েছিল জাপানে ভয়াবহ নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে।

এমনকি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলীর মাঝেও আমরা ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। আমেরিকার বিগত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কৃষ্ণাঙ্গ, মুসলিমপন্থী জনগণ, অভিবাসীদের প্রতি ঘৃণা পুনরায় শ্বেতাঙ্গদের মাঝে হিংসা এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। যা বিভিন্ন সময়ে বহু মানুষের প্রাণহানির কারণও হয়েছে।

এছাড়া, খেলাধুলার জগতও আবেগতাড়িত ক্রোধ থেকে রক্ষা পায়নি। ২০০৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালে ফুটবল কিংবদন্তি ফ্রান্সের জিদান একজন ইটালিয়ান খেলোয়াড়কে মাথা দিয়ে সজোরে গুঁতো মারেন। যার ফলে তাকে লাল কার্ড নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় এবং ঐ ম্যাচে ইটালি জয়লাভ করে।

এভাবেই রাগ কখনো কখনো স্বাভাবিক আবেগ হিসেবে প্রকাশিত না হয়ে বা স্বাভাবিক আবেগের সীমায় না থেকে ধ্বংসাত্মক ঘটনার হেত হয়ে ওঠে। আর সে কারণে আমাদের নিজেদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এবং রাগকে প্রকাশ করার কৌশল জব্দ করা প্রয়োজন।

Previous articleগার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বললে লিঙ্গের আগায় বীর্য আসে
Next articleকিশোরদের অপরাধ প্রবণতাই সুস্থ সমাজ গঠনের পথে বাধা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here