ধনী দেশের মানুষ ডিপ্রেশনের ওষুধের ওপর বেশি নির্ভরশীল

ডিপ্রেশন প্রতিষেধক ওষুধ ‘অ্যন্টিডিপ্রেসেন্ট’-এর দিকে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকে পড়ছে৷ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) এর তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে৷ তবে এই ওষুধের কার্যকারিতা প্রশ্ন সাপেক্ষ৷
জার্মানির সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন বিপিই-র মাটিয়াস সাইবট জানায়, ডিপ্রেশনের ওষুধ, অ্যন্টিডিপ্রেসেন্ট বন্ধ করে দিলে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া- বিপর্যস্ততা, মাথা ব্যথা, পেটের গোলমাল ইত্যাদি দেখা দিতে পারে ৷ এই তালিকাটা আরো দীর্ঘ হতে পারে৷ অদ্ভুত হলেও লক্ষ্য করা গেছে, নতুন এক ধরনের ওষুধ আত্মহত্যার ঝুঁকি বরং বাড়িয়ে দেয়৷ এ সব বিষয়ে গবেষকদের মধ্যে জোরে শোরে আলাপ-আলোচনা চলছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও খুব বেশি চিন্তা ভাবনা না করেই স্মার্টিস-এর মতো ডিপ্রেশনের ওষুধের প্রেসক্রিপশন দেওয়া হচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রে মানসিক রোগের চিকিৎসকরাই এই ‘মাদক’ ধরনের ওষুধের অপব্যবহার করে থাকেন৷ ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের লাভের লোভ অনেক সময় সামলাতে পারে না বলেই এই সব ওষুধের এত বিস্তৃতি ঘটছে৷ এর সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু চিকিৎসকের উৎকোচ গ্রহণের প্রবণতা৷
অ্যন্টিডিপ্রেসেন্ট বিরোধী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত সাইবট-এর ধারণা যে সঠিক, সেটা বোঝা যায় প্রেসক্রিপশনের সংখ্যা দেখে৷ অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সংক্ষেপে ওইসিডি-এর তথ্য মতে এই ওষুধের ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এমনকি গত ১০ বছরে ওইসিডিভুক্ত দেশগুলিতে এই হার দ্বিগুণ হয়েছে৷
জার্মানিতেও অ্যন্টিডিপ্রেসেন্ট-এর ব্যবহার বেড়েছে৷ অবশ্য ওইসিডি দেশগুলির গড় হারের চেয়ে কিছুটা কম৷ এক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ক্যানাডা৷ ২০১১ সালে আইসল্যান্ডের ১০ শতাংশ মানুষ মেজাজ প্রফুল্ল রাখার ওষুধ সেবন করেছেন৷ ২০০০ সালে এই হার ছিল ৭ শতাংশ৷ বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৩৫০ মিলিয়নের মতো মানুষ ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদে ভুগছে৷
ডিপ্রেশন প্রতিষেধক ওষুধের ব্যবহারের বৃদ্ধি পাওয়ার বহু কারণ রয়েছে: ‘‘এর মূল কারণ ডিপ্রেশন রোগটিকে দ্রুত ও স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে৷” বলেন জার্মানির সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রধান ক্রিস্টা রোথ সাকেনহাইম৷
দক্ষিণ ইউরোপে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনিশ্চিয়তার কারণে ডিপ্রেশনের ওষুধের চাহিদা বেড়েছে৷ বিশেষ করে স্পেন ও পর্তুগালে এই হার ২০ শতাংশ বেড়েছে৷ এছাড়া ওষুধের ক্ষেত্রটাও বেড়েছে৷ আগে অ্যন্টিডিপ্রেসেন্ট শুধু ডিপ্রেশন দমনের জন্য দেওয়া হতো৷ কিন্তু এখন ক্রনিক ব্যথা কিংবা আতঙ্কের কারণেও দেওয়া হয়ে থাকে এই ওষুধ৷
প্রোজাক এবং এই জাতীয় ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷ কয়েক বছর আগের বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে হালকা ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে প্লাসিবোর চেয়ে ভালো কাজ করে না এই ওষুধ৷ ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ সমালোচনা করে বলা হয়েছে, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সংক্রান্ত তিন ভাগের এক ভাগ সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি৷ এর অর্থ এই সব ওষুধের সম্ভাব্য বিপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷
মানসিক চিকিৎসক রোথ-সাকেনহাইম বলেন, ‘‘দুঃখজনক হলো একজন এই ওষুধ খেলে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেটা জানার জন্য আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনো পূর্বাভাষ সিস্টেম নেই৷”
তবে সাধারণত এই সব ওষুধ সেবন করলে রোগী আবার আগের অবস্থায় ফিরতে পারেন৷ অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে আবার সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করতে পারেন৷ যারা কঠিন ডিপ্রেশনের কবলে পড়েন, তাঁরা যে কোনো উপায়েই এর হাত থেকে উদ্ধার পেতে চান৷
তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে

Previous articleক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়া চলছে
Next articleবিড়বিড় করে নিজের সঙ্গে কথা বলি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here