কল্পনা ও প্রতিভার বিকাশ

অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল

শিশুর কল্পনার জগৎ বৈচিত্র্যময়। সুন্দরের পরিচর্চার মাধ্যমে কল্পনাশক্তির গাথুঁনি দৃঢ় করা যায়। প্রতিভার একটি বড়ো অংশের প্রকাশ ঘটে কল্পনার মাধ্যমে। এজন্য এটিকে কল্পনা-প্রতিভাও বলা যেতে পারে।

কল্পনা আসলে এক ধরনের খেলা, মনের দৌড়ঝাঁপ, ছোটাছুটি মনের খেলা। বাস্তব জীবনে শিশুর চারপাশে যারা আছে, যেসব বস্তু রয়েছে, সবকিছুর ব্যাপারে শিশুর মনে ধারণার বীজ জমা হতে থাকে, নানা ঢঙে বীজটির শাখা-প্রশাখা পল্লবিত হয়ে ওঠে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এমনটি ঘটতে থাকে, ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে এটি আসে না। আনন্দময় উচ্ছ্বাস থেকে ইতিবাচক কল্পনার রাজ্য সশোভিত হয়।

কথা বলা শুরুর আগে শিশুর কল্পনাশক্তি বোঝা যায় না। কল্পনার বিষয় এ সময় অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার সামর্থ্যও থাকে না। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, কল্পনা-প্রতিভা বা কল্পনাশক্তিটি উজ্জ্বল, তীব্র, সক্রিয় কিংবা প্রকাশিত হতে থাকে দুই বছর বয়স থেকে।

বয়সের এক একটি সিঁড়ি অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গে কল্পনার রথযাত্রা গতিশীল হয় আরো বেশি, আরো স্পষ্ট ও স্বচ্ছ কল্পনার জাল বোনার ক্ষমতা অর্জন করে শিশু।

পাঁচ বছরের শিশু কল্পনা ও বাস্তবতার পার্থক্য বুঝতে পারে। তারপরও শিশুর মন থেমে যায় না। কল্পনা চলতেই থাকে। কারণ শিশু কল্পনার মাধ্যমে আনন্দ পেয়ে থাকে।

দৈনন্দিন জীবনের দেখা, শোনা বা অন্য অভিজ্ঞতা লব্ধ স্মৃতির ওপর ভর করে শিশুর কল্পনার পাখা উড়তে থাকে, কল্পনাশক্তি বিন্যস্ত হয়।

শিশুর মনে নতুন নতুন কল্পনা জাগতে থাকে, যদি:

শিশুর সামনে কিছু পড়া হয়। টেলিভিশনে সুন্দর ছবি বা কমিকস দেখানো হয়। ছবির বই দেখিয়ে কিছু শেখানো হয়। দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনা-রটনা ঘটে শিশুর সামনে। অভিজ্ঞতা অর্জনের উৎস যত চিত্তহারী ও চমক লাগানোর মতো হবে, তত বেশি স্পষ্ট এবং জোরালোভাবে কল্পনাও তা স্মরণ করতে পারে শিশু। আকর্ষণীয় এ ধরনের স্মৃতি কল্পনা-প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কল্পনা ও বাস্তবতার ফারাক বুঝতে বড়োদের অসুবিধা নেই। কিন্তু শিশুরা সব সময় পার্থক্য করতে পারে না, কল্পনা ও বাস্তবতা তারা গুলিয়ে ফেলে। শিশুদের এ ধরনের ভুলের ব্যাপার বড়োরা অনেক সময় বোঝেন না। মা-বাবা নিজেদের ধারণা নিয়ে বসে থাকেন এই ভেবে যে বইয়ের পড়া গল্প কিংবা টেলিভিশনে দেখা ছবি বাস্তব নয়, কল্পনায় গড়া; এটি বড়োদেরও নিজস্ব বোধ, ঠিক আছে।

কিন্তু শিশু যখন কোনো ধরনের দৃশ্য পড়ে বা দেখে ভীত হয়, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, তখন মা-বাবাও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। রাতে যখন ঘুমের ঘোরে শিশু আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে, ব্যাকুল হয়ে মা-বাবা ছুটে যান শিশুর কাছে। কল্পনাপ্রবণ মন থেকে শিশু এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। বড়োদের বিষয়টি জানা থাকা উচিত।

উদাহরণ হিসেবে একটি ছবির দৃশ্য আমরা কল্পনা করতে পারি। ধরা যাক, ছবিতে একটি গাছ দেখানো হলো মানুষের ভূমিকায়। গাছটি শাখা-প্রশাখা মানুষের হাতের মতো ব্যবহার করছে। গাছের নিচ দিয়ে কোনো শিশু যাচ্ছে। এ সময় ডালপালাগুলো নিচে এসে শিশুটি ধরে ফেলছে।

বড়োরা উপরিউক্ত দৃশ্যটিকে মজাদার ঘটনা হিসেবে দেখবে, যেটির বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু দৃশ্যটা দেখার পর হয়ত শিশুটি গাছের নিচ দিয়ে আর যাচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে। এড়িয়ে যাচ্ছে গাছপালা। মনে করতে পারে গাছের ডাল নেমে এসে তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে।

প্রাথমিক শৈশবে কল্পনাশক্তির চমক নানা ঢঙে আসতে পারে। কোনো কোনো কল্পনায় ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতিও হতে পারে। কারণ কল্পনার মধ্যমে বাস্তবতা সম্পর্কে শিশুর মনে ভুল ইমেজ গড়ে উঠতে পারে।

কল্পনার মাধ্যমে শিশুর মনে সার্বক্ষণিক তৃপ্তি জেগে থাকতে পারে। বিষয়টা শিশুর অভ্যাসে পরিণত হয়ে যেতে পারে। এতে পরবর্তী জীবনে ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

যতই বড়ো হতে থাকে শিশু, এ ধরনের আচরণগত সমস্যা কমে যায়। ইতিমধ্যে সে জানতে শেখে যে এটি প্রকৃতই কল্পনার বিষয়। বাস্তবসম্মত উপায়ে তৃপ্তি পাওয়ার উৎসও তখন পেয়ে যায় সে। বাস্তব জগতে এভাবে ঢুকে যায় শিশু।

শিশুর কল্পনাপ্রতিভা: মাবাবার করণীয়

কল্পনা হতে পারে সম্ভাব্য সমস্যার উৎস। হতে পারে আনন্দের উৎস। তাই মাতা-পিতাকে শিশুর কল্পনাশক্তির বিকাশের প্রতি নজর রাখতে হবে, কৌশলে গাইড করতে হবে।

নিচের পদ্ধতিতে মা-বাবা শিশুর কল্পনা-প্রতিভার নৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করতে পারেন:

লব্ধ অভিজ্ঞতাটি কি কেবলই কল্পনার, নাকি বাস্তবতাও আছে বিষয়টি বোঝার জন্য শিশুর মনে নাড়া দিতে হবে, কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে।

টেলিভিশনের কিছু দৃশ্য দেখা বা কোনো কিছু শোনার মাধ্যমে শিশু আতঙ্কগ্রস্ত হতে পারে, ভেঙে পড়তে পারে। মা-বাবা এ ধরনের দৃশ্য দেখা থেকে শিশুকে কৌশলে বিরত রাখতে পারেন।

যদিও কোনো কোনো ক্ষতিকর দৃশ্য শিশুর কল্পনার জগতে সাময়িক আনন্দ জাগায়Ñকালক্রমে তা ক্ষতিও করতে পারে। এ ধরনের দৃশ্যের ব্যাপারে কৌশলে শিশুকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

আনন্দময় কল্পনার বিস্তার ঘটাতে পারে, এমন সব উৎস ব্যবহারে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। শিশুর মনোজগৎ সমৃদ্ধ করার জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ গল্পও শিশুকে বলা যেতে পারে।

প্রাথমিক শৈশবে কল্পনাসমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার ধরন

দিবাস্বপ্ন: জেগে থাকা অবস্থায় দিবাস্বপ্নে বিভোর হতে পারে শিশু, অলীক কিংবা বাঁধনহারা কল্পনার স্রোতে ভেসে থাকতে পারে। উদ্ভট কল্পনার রথও এ সময় তাকে টেনে নিয়ে বেড়াতে পারে।

কাল্পনিক বন্ধু: শিশু যেমন বাস্তবের বন্ধুর সঙ্গে খেলতে পছন্দ করে, তেমনি পছন্দনীয় একজন কাল্পনিক বন্ধুও বাছাই করে নিতে পারে। বাছাইকৃত কাল্পনিক বন্ধুটির সঙ্গে সে খেলতে থাকে। বাস্তবের বন্ধুর সব ধরনের বৈশিষ্ট্য কাল্পনিক বন্ধুর মাঝে বর্তমান থাকে।

কাল্পনিক অসুস্থতা: শিশুর কল্পনায় নিজের দেহের কোথাও ব্যথা অনুভব করতে পারে। ব্যথার তীব্রতা ও ধরন একদম বাস্তব ব্যথার মতোই অনুভূত হবে। শিশুরা অন্যকে মোটেও বোকা বানানোর জন্য এমনটি করে না, অন্যকে কখনো বোকা ভাবতে পারে না।

সব বস্তুর প্রাণ আছে সর্বপ্রাণ বাদে (Animism) বিশ্বাস: সব বস্তুর অস্তিত্বে প্রাণের সন্ধান করে বেড়ায় শিশু। মনে মনে বিশ্বাস করে খেলনা পুতুল, ফার্নিচার, পাথর, বাতাস সবকিছুরই প্রাণ আছে। প্রাণিজগতে জীবনের অস্তিত্বের মতো জীবন খুঁজে পায় সে প্রিয় কোনো খেলনার ভেতর। এমনকি চেয়ারে বসতে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারে শিশু। ভাবতে পারে চেয়ার ব্যথা পাবে। ইত্যাদি নানা ঢঙে শিশুর সর্বপ্রাণবাদ কল্পনা ঘুরে বেড়ায়।

অতিরঞ্জন বা অতিকথন: চারপাশের মানুষের কিংবা বস্তু সম্পর্কে শিশু অনেক কিছু বলতে পারে। বেশি কিংবা বাড়িয়ে বলার অভ্যাস অনেক শিশুর মধ্যেই দেখা যায়। যা বলে, সাধারণত সেটি বিশ্বাস করার কারণেই বলতে পারে। বিষয়টা নিয়ে যতই চিন্তা করবে কিংবা ভাববে ততই অতিরঞ্জনের মাত্রা বেশি দেখা যাবে শিশুর কথায়।

স্বপ্ন: স্বপ্ন আসে ঘুমের মধ্যে। দিবাস্বপ্ন চলতে থাকে জাগা অবস্থায়। স্বপ্ন বনাম দিবাস্বপ্নের এটিই বড়ো পার্থক্য। এমনও হতে পারে, ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠতে পারে শিশু। দুঃস্বপ্নের কারণে এমনটা ঘটতে পারে। শিশুকে তখন ভীতসন্ত্রস্ত কিংবা আতঙ্কগ্রস্ত মনে হবে।

শিশুর আঁকতে শেখা কল্পনাপ্রতিভার ব্যবহারিক বিকাশ

খুব অল্প বয়স থেকে শিশুর মনে নিজের সম্বন্ধে, চারপাশের জগৎ সম্বন্ধে এমনকি চারপাশের মানুষ ও তাদের আচরণের প্রকাশভঙ্গি সম্পর্কে নিজস্ব ইমেজ তৈরি হয়ে যায়। মনোজগতের ছবি, ভাব বা মানসচিত্রের প্রতিচ্ছায়া বাইরে প্রতিফলিত হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে অঙ্কনবিদ্যাÑপেনসিলের সাহায্যে রেখা টেনে ছবি আঁকার পদ্ধতি।

শিশুর কল্পনা-প্রতিভা দুই বছর বয়সে যথেষ্ট বিকাশ লাভ করে। এ সময় থেকে সংকেতের মাধ্যমে বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে পারে শিশু। নিচের উদাহরণগুলোর প্রতি নজর দিতে পারি আমরা:

পুতুল হতে পারে মানুষের প্রতীক। অর্থাৎ মানব চরিত্রের রূপায়ণ পুতুলের মধ্য দিয়ে দেখতে পায় শিশু। শিশুর কাছে মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে পুতুল।

ছোটো খেলনা গাড়ির মাধ্যমে বাস্তব গাড়ির প্রতিচিত্র দেখতে পায় সে। বস্তু বা বস্তুর ব্যবহার সম্বন্ধে শব্দ তৈরি করতে পারে সে।

আঁকার মাধ্যমে ঘটনার বর্ণনা প্রতিফলিত হয় এবং তার অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। একসময় শিশু কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পায় না, কল্পনার জগৎ ও বাস্তব জগৎ আলাদা করতে পারে না। কল্পনা-প্রতিভার বিকাশ গতিশীল হয় এভাবে।

ছবি আঁকতে শেখা

অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে শিশুর মনে কল্পনা ও অনুভূতি গড়ে ওঠে। সেই অনুভূতি ও কল্পনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে আকার মধ্য দিয়ে। ছবি এঁকে শিশুরা নিজেদের ভেতরের মন বাইরে প্রকাশ করতে পারে।

শিশুরা আঁকতে ভালোবাসে। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে শিশুরা পেনসিল বা হালকা রঙের চকখড়ি হাতে পেলে আঁকার চেষ্টা করতে থাকে। প্রচেষ্টার শুরুটি হবে হিজিবিজি লেখা, ছড়ছড় করে বা অযত্নের সঙ্গে পেনসিলের আঁচড় কাটা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেনসিল চালনায় শিশু দক্ষ হয়ে উঠবে, নিয়ন্ত্রণক্ষমতা বাড়বে, হিজিবিজি আঁকগুলো ধীরে ধীরে বাস্তব ছবিতে বদলে যেতে থাকবে।

ছবি আঁকা: শেখার ধাপ

শেখার সময়কাল থেকে নিচের অধিকাংশ বা সবগুলো ধাপই শিশুরা ধীরে ধীরে অতিক্রম করে। ধাপগুলো একসঙ্গেও ঘটতে পারে। যুগপৎ ঘটে যাওয়া ধাপগুলো আলাদা করে বর্ণনা করা জটিলই বলা চলে। তবু নিচের ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:

ধাপ: শিশুর হাতটি সামনে-পেছনে মুভ করে, ছড়ছড় করে বা অযত্নের সঙ্গে পেনসিলের আঁচড় কাটে হিজিবিজি লেখা তৈরি হয়।

ধাপ: কাগজ থেকে পেনসিল ওপরে তুলতে সমর্থ হয় শিশু; বিভিন্ন দিকে ঘোরাতে পারে।

ধাপ: হিজিবিজি দাগে পরিধি রেখা কিংবা বৃত্তের স্বরূপ ফুটে উঠতে থাকে।

ধাপ: হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গোলাকার বৃত্ত তৈরি করতে পারে।

ধাপ: মানুষের ছবি আঁকা শুরু করতে পারে, একটি মুখের ছবির স্বরূপ তুলে ধরে গোলাকার আঁকের মাধ্যমে। গোলাকার বৃত্তটিতে চোখ, নাক কিংবা মুখের চিহ্ন বসাতে পারে।

ধাপ: বৃত্তের চারদিকে লাইন বা রেখা বসাতে পারে।

ধাপ: বৃত্তের ওপরের দিকে গুচ্ছরেখা টেনে চুলের চিহ্ন আঁকতে পারে, বৃত্তের পাশ থেকে বাহু এবং নিচের দিক রেখা টেনে পায়ের চিহ্ন বসানোর চেষ্টা চালাতে পারে।

ধাপ: বৃত্তের দুই পাশ থেকে রেখা টেনে প্রসারিত হাতের চিহ্ন দেখানোর সামর্থ্য তৈরি হয়। বৃত্তের নিচের অংশ থেকে পাশাপাশি দুটি রেখা টেনে পায়ের চিহ্ন বসাতে পারে।

ধাপ: এ স্তরে আঁকার ক্ষেত্রে ফিগার গুরুত্ব পাবে। পায়ের পাতা আঁকতে পারবে।

ধাপ১০: অঙ্কিত ছবিতে কাপড়-চোপড় পরাতে পারবে। ধীরে ধীরে শিশু মানুষের চারপাশের গাছ-গাছালি, বাড়িঘর, পশুপাখি আঁকতে সচেষ্ট হতে থাকবে এবং সফলও হবে একসময়। (সূত্র: ইবি হারলক, পামেলা মিনেট)

কখন শেষ হবে ছবি আঁকা শিশুরা চাইবে, তাদের আঁকা চিত্র প্রশংসিত হোক। চিত্রটিকে সবার নজরে আসে, এমন স্থানে পিন দিয়ে সেটে রাখতে পারে। এমনও হতে পারে, ছবিটি আঁকার পর হিজিবিজি দাগ বসিয়ে কিংবা রং ভরিয়ে অস্পষ্ট করে দিতে পারে সে, যেন এটি দেখা না যায়। এমনি ঢঙেও তারা মজা পেতে পারে।

লেখালেখিতে কল্পনাশক্তি

রোমান্টিক যুগের কবিরা সৃজনশীল রচনায় কল্পনাশক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। কল্পনাশক্তি প্রখর না হলে লেখার মান বাড়বে না, শিল্পসম্মত হবে না। বর্তমানে জানা তথ্য, বিষয় বা ধারণাকে উপাদান/ উপকরণ হিসেবে ধরে তার ওপর সৌধ নির্মাণ করেন শক্তিমান সাহিত্যিকগণ।

এ প্রক্রিয়া সাহিত্য সৃজনে বড়ো ভূমিকা রাখে। সৌধটা কেমন হতে পারে তার ধারণা লেখকের পূর্বে ছিল না। নতুন ঢঙে আপন মনের মাধুরী এবং প্রজ্ঞার আলো ঢেলে কল্পনার রং মাখতে থাকেন লেখক। জীবনযাপনকে নানা রঙে রাঙাতে থাকেন। কলম তাঁকে টেনে নিয়ে যায় আপন পথে। কল্পনা-ঢেউয়ে ভেসে লেখকের কলম এগোতে থাকে।

সৃজনে নির্মিত হয়ে যায় কাব্যস্রোত, অসাধারণ সাহিত্য (Effectuative imagination)। যত বেশি বই পাঠ করা যায়, তত বেশি আইডিয়া মস্তিষ্ককে আলোড়িত করে। সৃজন কাজে ততবেশি বৈচিত্র্যময় ধারণার ডালপালা বিস্তৃত হতে থাকে। অপরদিকে বুদ্ধিদীপ্ত কল্পনা বিশেষ সচেতন মনের খেলা; ইচ্ছেকৃতভাবে কলম চালানো। এই যাত্রায় মনের প্রজ্ঞার বিষয়টা প্রাধান্য পায় (Intellectual imagination)।

কল্পিত ফ্যান্টাসি (Imaginative fantasy), জীবনও পরিবেশের সঙ্গে একাত্বতা (Empathy), আবেগ-প্রেষণার টান, স্বপ্নময় সত্তার বাস্তবায়ন এবং স্মৃতির পুনঃনির্মাণ এসব ক্ষেত্রে কল্পনাশক্তির বিকল্প নেই সাহিত্য সৃজনে।

শিশুকাল থেকেই কল্পনাশক্তি বিকাশের দিকে নজর রাখতে হবে বাবা-মাকে। তবে কল্পনা প্রতিভা একটি সৃষ্টিশীল ঐশ্বরিক অবদান, এটাও মাথায় রাখতে হবে।

অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল

সূত্র: মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleঅনলাইনে অধিক সময় ব্যয় করছেন? সীমারেখা টানুন কিছু সহজ পদক্ষেপে
Next articleমানসিক সুখ ও স্বাস্থ্যের জন্য নির্ধারণ করতে হবে জীবনের লক্ষ্য
প্রাক্তন পরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here