সেলফি কি অভ্যাস ও মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত?

0
64

‘সেলফি’ তোলার বিশাল ঝোঁক আশেপাশের মানুষের মধ্যে খুব তীব্র ভাবে দেখা যায়। কিন্তু এই সেলফির সঙ্গে মনোবিজ্ঞানীরা ব্যক্তির অভ্যাস ও মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক পেয়েছেন। যেখানে একজন মানুষ নিজের চেহারার ব্যাপারে এক ধরণের আসক্তিও কাজ করে।
সাইকোলজিস্ট ‘ডেভিড ভেল’ দি সানডে টাইমস কে বলেন, ‘ক্যামেরা ফোনের উত্থান পরবর্তী সময়ে বডি ডিস-মরফিক ডিজঅর্ডার নিয়ে আমার কাছে যে রোগীরা এসেছেন তাদের দুই তৃতীয়াংশের মধ্যে ক্রমাগত নিজের সেলফি তোলা এবং তা সামাজিক মাধ্যম গুলোতে পোস্ট করার প্রতি এক ধরণের তাড়ণা কাজ করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রোগীকে তার আসক্তি মূলক কাজের পিছনের কারণ এবং তা নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে কগ্নিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি বা সিবিটি প্রয়োগ করা হয়।’
নিখুঁত সেলফি তুলতে না পারার কারণে ‘ড্যানি বাউম্যান’ নামে একজন ব্রিটিশ তরুন আত্মহত্যা করার চেষ্টা চালায়। সে সেলফি তোলা নিয়ে এতটাই আসক্ত যে, দিনের ১০ ঘন্টা সে ব্যয় করে একটি নিখুঁত সেলফি তোলার পিছনে। প্রতিদিন গড়ে তার সেলফি তোলার পরিমাণ ২০০ টি। ১৯ বছরের এই তরুণ সেলফি তুলতে যেয়ে হারিয়েছে ৩০ পাউন্ড ওজন, স্কুল থেকে হয়েছে ড্রপ আউট এবং ঘর থেকে বাহিরে যায়নি প্রায় ৬ মাস যাবৎ। সে ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথেই ১০ টির মত সেলফি তুলে ফেলতো। একটা ছবি তুলতে যেয়ে ব্যর্থ হওয়ার কারণে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে বাউম্যান আত্মহত্যা করতে চেয়ে ছিল ওভারডোজের মাধ্যমে। কিন্তু তার মা তাকে বাঁচিয়ে ফেলে।
দি মিররকে দেয়া একটা সাক্ষাৎকারে বলেন বাউম্যান বলেন, ‘আমি ক্রমাগত নিখুঁত সেলফি তুলতে চাইতাম, যখন দেখলাম আমি পারছিনা তখন আর আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছে রইলো না। আমি হারিয়েছি আমার বন্ধু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি আমার জীবনও।’
এই তরুণটিকে বলা হয় ব্রিটেনের প্রথম সেলফি আসক্ত ব্যক্তি। তার এই প্রযুক্তি আসক্তি ও একই সঙ্গে বডি ডিস-মরফিক ডিজঅর্ডার এবং অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার দূর করার জন্য থেরাপির সাহায্য নেয়া হয়। লন্ডনে অবস্থিত মডসলি (Maudsley) হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তার থেরাপির অংশ হিসেবে তার কাছ থেকে ১০ মিনিটের জন্য আইফোন নিয়ে নেয়া হয়। যা পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ৩০ মিনিটে এবং তার পর ১ ঘন্টায় রূপান্তরিত হয়।
যদিও এই কাজটি দুঃসহ যন্ত্রনাদায়ক ছিল শুরুতে কিন্তু আমি জানতাম আমাকে এটা করতে হবে যদি আমি বাঁচতে চাই বলে জানান দি মিররকে।
ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (যেমন ফেসবুক বা টুইটার) প্রতি আসক্তিকে অসুস্থতা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। প্রতি বছর ১০০ জনের মত ব্যক্তি এই কারণে চিকিৎসা সেবা নিতে দ্বারস্থ হন।
প্রযুক্তি ভিত্তিক নারসিসিজমের উত্থানের কারণে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দেয়, তা হলো একজন ব্যক্তির উপর অসাধ্য লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা। বিয়োন্সে বা শাকিরার মত হতে চাওয়াটা এমনিতেই কঠিন। কিন্তু যখন আপনি কঠোর পরিশ্রমের জন্য নিজেকে তৈরি না করেই সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা করবেন তখন আপনার সেই চাওয়াটা মূল্যহীন। উচ্চ আকাঙ্খা এবং অলসতার সংমিশ্রনের মত ক্ষতিকর খুব কম জিনিসই আছে। শেষ পর্যন্ত অনলাইনে নিজের নারসিজমের প্রকাশ শুধুমাত্র নিজেকে উপস্থাপনের কৌশলই না বরং তা নিজের আত্মবিশ্বাসকে জোড়া লাগানোর একটা উপায় মাত্র।
চিকিৎসকগণ বিশ্বাস করেন যে এই আচরণ গুলো পরবর্তীতে মস্তিষ্কের সমস্যার সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে আত্মবিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত গুলো।
‘সেলফি’ শব্দটি ২০১৩ সালে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির “Word of the Year 2013” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এটার সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, ‘সেলফি ওয়েবক্যাম বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিজের দ্বারা নিজের ছবি তোলা যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে হয়।’
 
তথ্যসূত্র: এনলাইটেন্ট কনসিয়াসনেস।
অনুবাদটি করেছেন মাঈশা তাহসিন অর্থী।

Previous articleবয়সের সঙ্গে গাঁজা সেবনের সম্পর্ক
Next articleকেন কিছু মানুষ মাদকাসক্ত?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here