মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়াই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গভীর করে

মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়াই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গভীর করে

স্বামী-স্ত্রী যখন একে অপরের মনের কথা বুঝতে পারে এবং একে অন্যের মতামতের প্রাধান্য দেয়, এমন মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়াই সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী এবং আরও গভীর করে।

পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষ নিজস্ব চিন্তা ভাবনা এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে। এমন বাস্তবতায় যখন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের দুজন মানুষ একে অপরের সাথে দাম্পত্য জীবন শুরু করে তখন এই ভিন্ন মানসিকতার সামাঞ্জস্য বিধানই মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। এই চ্যালেঞ্জ যে সব দম্পতী সফল ভাবে নিতে পারে তাদের সম্পর্কই অধিক দীর্ঘস্থায়ী এবং গভীর হয়। আর যাদের মাঝে এই মানসিক বোঝাপড়া একদমই ভালো নয় তাদের সম্পর্ক অর্থবহ হয় না এবং সহজে ভেঙ্গে যায়।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধুমাত্র শারীরিক সীমায় সীমাবদ্ধ নয় বরং অধিক মাত্রায় মানসিক। স্বামী যেমন স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক চাহিদার গুরুত্ব দেবেন, তেমনি একজন স্ত্রীও তার স্বামীর সব চাহিদার গুরুত্ব দেবেন। সময় এবং অবস্থা বুঝে দুজন দুজনার মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। সফল সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটাই কাম্য। একটি সম্পর্কে কেন মানসিক বোঝাপড়া এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়?

মনস্তত্ত্ববিদ গণের মতে, যে কোন সম্পর্ক শুধুমাত্র জাগতিক বস্তুর আদান প্রদানের ফলেই গড়ে ওঠে না বরং মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে এবং টিকে থাকে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এমন একটি সম্পর্ক যেখানে দুজন ব্যক্তি একে অপরের উপর ভরসা করে, আস্থা রেখে এবং সম্মান প্রদর্শন করে সারা জীবন পাশে থাকে।

এই পাশে থাকা শুধু একে অপরের সাথে একই গৃহে থাকা নয় কিংবা শারীরিক সম্পর্ক নয় বরং বৈবাহিক সম্পর্ক একটি প্রতিশ্রুতি; প্রতিশ্রুতি একে অপরের ভিন্নতাকে মেনে নেওয়ার, প্রতিশ্রুতি একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠার। আর এভাবে ভিন্নতাকে মেনে নিয়ে, একে অপরের শূন্যতাকে পূর্ণ করার ফলেই সম্পর্ক সফল, অর্থপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে। একই সাথে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পায়।

দাম্পত্য জীবনে দুজন মানুষের মাঝে যখন এই মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া না থাকে তখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুজনার মধ্যে বিপরীত মানসিকতা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। তখন দেখা যায়, প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি ভালোলাগা বা মন্দ লাগায় তারা একে অপরের সঙ্গী না হয়ে প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে।

আর দুজন প্রতিপক্ষ কখনোই একে অপরের সান্নিধ্যে মানসিক শান্তি উপভোগ করে না। আর এমন দাম্পত্য জীবন কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাছাড়া যখন স্বামী স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্বের বদলে বৈরিতা সৃষ্টি হয়, তখন তাদের মাঝে ঘনিষ্ঠতাও কমে যায়। এতে সম্পর্কের দৃঢ়তা নষ্ট হয়। সম্পর্কে ভাঙনের সুর বেজে ওঠে।

তাই বলা যায়, দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে হলে এবং সম্পর্ক আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী করতে চাইলে একে অপরের মন বোঝার প্রচেষ্টা করুন। ভিন্ন মতাদর্শের হলেও একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। একে অপরের ভালোলাগা এবং খারাপ লাগা গুলোকে গুরুত্ব দিন।

এভাবেই দুজনার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া আরও ভালো হবে এবং সম্পর্কের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পাবে। এমন সম্পর্কগুলো যেমন অন্যদের কাছে আদর্শ সম্পর্কের উদাহরণ প্রস্তুত করে, তেমনি সব ধরণের প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে টিকে থাকে।

Previous articleমনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা পরস্পর সম্পূরক
Next articleমানসিক স্বাস্থ্যে সুস্থ সম্পর্কের ভূমিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here