হৃদয় নাচে??
অঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে আবেগের যে প্রকাশ তার অন্যতম শিল্পমাধ্যম নৃত্য বা নাচ। প্রকৃতির যে নাচ তাও মানুষের মনে দোলা দেয়। গাছের ডালে, সর্ষের ক্ষেতে সবুজ-সোনালী ধানে, বাতাসের বয়ে চলায় যে অপূর্ব নৃত্য শৈলি সৃষ্টি হয় তা যে কোনো মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। সৃষ্টি করে অপরূপ সুখানুভূতি।
পাখির উড়ে চলার, জলের বয়ে চলার, মেঘের ভেসে যাওয়ার ছন্দও মনকে স্পন্দিত করে। শুধু আনন্দের স্পর্শ নয় টুপটাপ বৃষ্টি, বিশ্রাম্ভ নির্জন দুপুরে পাতাঝরা ছন্দ মনকে কখনো করে উদাস কখনো বা বেদনার্ত। হরিণের চপল ছুটে চলা চকিতে মনকে করে তোলে চঞ্চল। প্রকৃতির নৃত্য এভাবেই আমাদের মনকে প্রভাবিত করে।
নৃত্যশিল্পী তাঁর নাচের মাধ্যমে নানাভাব প্রকাশ করেন ঠিকই। তবে নৃত্য মূলত আনন্দানুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ। মন যখন প্রফুল্ল থাকে কিংবা পুলকিত হয় তখন মানুষ নৃত্যের মাধ্যমেই তা অনুভূতি প্রকাশ ঘটায়। উৎসবে, সামাজিক অনুষ্ঠানে খেলার বিজয়ে, পরীক্ষার ভালো ফলাফলে মানুষের উল্লাসের প্রকাশ ঘটে ঢোল সহ অন্য বাদ্য যন্ত্রের সাথে নাচের মধ্য দিয়ে।
নৃত্যের দর্শকেরা সবসময় ব্যাকরণ বুঝেন, এমন নয়। তবে যেকোনো অনুষ্ঠানে নৃত্যই দর্শককে তুলনামূলক বেশী উদ্বেলিত করে। নৃত্যের ভাষা আন্তর্জাতিক। রাষ্ট্রীয় ভূ-খণ্ডের গন্ডি পেরিয়ে নৃত্যের হৃদয় গ্রাহ্যতা সার্বজনীন। যেকোনো ভাষাভাষির মানুষের মনকে স্পর্শ করতে নাচ সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। দেখা যায়, যেকোনো দেশে সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি প্রেরণের সময় নৃত্য পরিবেশনা ও নৃত্য শিল্পী অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
শুধু নৃত্য বোদ্ধা নন, যেকোনো দর্শকই অবলীলায় স্বীকার করবেন নৃত্যের সাথে মনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ছোট শিশুটিকে কেউ শিখিয়ে দেয় না, আনন্দিত হলে সে নিজে থেকেই নিজের মত হাত পা নেড়ে নাচতে শুরু করে। নৃত্য মানুষের মনে সহজাতভাবেই প্রথিত।
লেখক
সঙ্গীতা ইমাম
শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী