ঘুমেই মানসিক সমাধান

ঘুমেই মানসিক সমাধান

বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে এবং রোগ প্রতিরোধ করার নিমিত্তেও ঘুম একটি বিশেষ কার্যকরী পন্থা। তাছাড়া ঘুমের ঘাটতি বা অনিদ্রাও বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সুস্থ জীবন যাপনে ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম।

সৃষ্টির শুরু থেকে আমাদের শরীর, মস্তিষ্ক, কাজের ধরণ এবং জীবন যাপন ব্যবস্থা নানা ভাবে পরিবর্তিত এবং উন্নত হয়েছে। তবে যেটি একই রকম রয়েছে সেটি হল মস্তিষ্কের বিশ্রাম নেওয়ার পদ্ধতি। আর সেটি হল ঘুম।

আমরা স্বাভাবিক ভাবে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাই। সারা দিনের কাজের পর যে দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে থাকি সেটি আসলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিশ্রামের সময়। তবে এ সময় আমাদের মস্তিষ্ক কিন্তু ঘুমিয়ে থাকে না। এটি অনেক বেশি সক্রিয় থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার একটি অভিযান পরিচালনা করে।

সাধারণত ঘুমের সময় আমরা সব ধরণের নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা এবং অনুভূতি থেকে মুক্ত থাকি। এ সময় শরীরের রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং আমাদের শরীর নতুন ভাবে বিভিন্ন কাজের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ পায়। আর এভাবেই ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে ঘুম আমাদের সেই চাপ মুক্ত হতে সহায়তা করে। আবার পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং আমরা নীরোগ থাকতে পারি।

প্রাচীন কাল থেকেই ঘুম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমেরও সুযোগ পায় তারা কম ঘুমানোর অভ্যাস সম্পন্ন মানুষের তুলনায় অধিক সুস্থ থাকতে পারে।

তাছাড়াও মনস্তত্ত্ববিদগণ বিভিন্ন মানসিক জটিলতা বা সমস্যা যেমন: দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, হতাশা ইত্যাদি থেকে পরিত্রাণের জন্য ভুক্তভোগীদের কাউনসেলিং এর সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। আবার এমন অনেক ওষুধ ও প্রেসক্রাইব করা হয় যেগুলো মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য বাধ্য করে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বর্তমান সময়ে আমাদের সবার মাঝে মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে ঘুমের ঘাটতিকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে তরুণ সমাজের মাঝে অধিক পরিমাণে রাত জাগার অভ্যাস পরিলক্ষিত হয় যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ।

ঘুমের ঘাটতি আমাদের মন সংযোগে বিঘ্ন উৎপন্ন করে। কারণে অকারণে আমাদের ধৈর্য চ্যুতি ঘটায়। আমাদের মাঝে হতাশা বৃদ্ধি পায়। এমনকি অনেকে এতোটাই খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হয় যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তাই এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে পরিমিত ঘুম অত্যন্ত জরুরী।

তাই বলা যায়, মানসিক জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে এবং একই সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পরিমিত ঘুমের বিকল্প নেই। পরিমিত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, এবং নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস আমাদেরকে সকল ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থেকে দূরে রাখবে এবং সুস্থ জীবন যাপন নিশ্চিত করবে।

Previous articleমানসিক সুস্থতায় নেইমারদের জয়
Next articleক্ষমতায়নঃ শাশুড়ি-বউ দ্বন্দ্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here